বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, যারা ফ্যাসিবাদকে সমর্থন ও ফ্যাসিবাদের বয়ানে সুর মিলিয়েছে তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। জনগণ তাদের বিচার দেখতে চায়। গতকাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা আতিকুর রহমান রুমন। বক্তব্য রাখেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা মোদাব্বের হোসেন প্রমুখ।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, যিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তে শহীদ হয়েছেন, সেই জিয়াউর রহমানের নামের আগে আজও অনেক গণমাধ্যমে শহীদ না লিখে প্রয়াত শব্দটি ব্যবহার করা হয়। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবেও তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। আমি সেই সব গণমাধ্যমকে বলতে চাই আপনারা কি শেখ হাসিনার আমলে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কারও কথা বলতে পেরেছেন? আপনারা ১৫ আগস্ট নিয়ে বড় বড় শিরোনাম দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু জিয়াউর রহমানকে শহীদ বলা বা স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ করতে গিয়ে আপনাদের এত সংকোচ কেন? বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, জাতীয় পার্টির দায় এখন বিএনপিকে নিতে হবে।
বিএনপি তো এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় নেই। এখনো তো অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। তাহলে আপনি কীসের দায়ের কথা বলছেন? নুরুল হক নুর ডাকসুর সাবেক ভিপি। তাকে একটি কার্যালয়ের মধ্যে আক্রমণ করা হলো। আমরা প্রথমে শুনেছিলাম জাতীয় পার্টির সঙ্গে গোলমাল। কিন্তু তাকে (নুর) যে আঘাত করেছেন, সেই লাল শার্ট পরা লোকটা কে? তিনি আরও বলেন, আপনি কেন বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলছেন? বিএনপি কি আপনাদের দায়িত্ব নেবে নাকি? আপনারা কারা? যখন ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম এবং সাইফুল ইসলাম হিরু গুম হন, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? যখন ছাত্র এবং যুব নেতারা গুম হন, তখনো জাতীয় পার্টিকে দেখা যায়নি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, যখন ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে কোনো ভোটার নেই, সেখানে কুকুর-বিড়াল এবং গরু-ছাগল ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেই নির্বাচনে যাব না, যাব না করতে করতে আপনারা (জাতীয় পার্টি) গেলেন। ২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর, প্রায় ৪৫ জন প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হলো। বিএনপি নির্বাচনে আসুক, সেটা শেখ হাসিনা চায়নি। সেদিন জাতীয় পার্টি কী ভূমিকা রেখেছে? ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে জি এম কাদের ভারতে গেলেন। সাংবাদিকরা তাকে (জি এম কাদের) প্রশ্ন করলেন, আপনার সঙ্গে কী কথা হলো? তখন জি এম কাদের বলেছেন, ওদের (ভারত) পারমিশন ছাড়া কিছু বলতে পারব না। এই হচ্ছে জাতীয় পার্টি। তিনি বলেন, আপনি কী ভারতের কোনো রাজনৈতিক দল? নাকি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল? এই আপনাদের মেরুদণ্ড? এই আপনাদের নীতি এবং আদর্শ? এই আপনাদের চরিত্র?
বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমরা কোনো মব সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি না। কে রাজনীতি করবে- কি করবে না, সেটা আইনের ব্যাপার। এটা সরকারের ব্যাপার। বিএনপি কোথাও কোনো মব সংস্কৃতি তৈরি করেনি এবং বিএনপি উচ্ছৃঙ্খল জনতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। কিন্তু বিএনপির একটা অ্যানালাইসিস আছে, জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী ছিল? আরও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ভূমিকা কী ছিল? তিনি আরও বলেন, রক্তপিপাসু শেখ হাসিনার আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে কারা রক্ষা করেছে? কারা ১৬ বছর জনগণের লক্ষ-কোটি টাকা পাচারের সুবিধা করে দিয়েছে? কারা এই দেশকে আওয়ামী ভয়ংকর স্বেচ্ছাতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব পালন করেছে? তার মধ্যে একটি হচ্ছে জাতীয় পার্টি। তিনি বলেন, আপনারা একটা কুলিং টাইম চান। ২০০৮-২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা দুই বছরের একটা কুলিং টাইম দিয়েছেন। তার পরে টর্চার করেছেন। বিএনপি কখনো টর্চারে বিশ্বাস করে না। বিএনপি কোনো অবস্থাতেই বেআইনিভাবে কোনো নির্যাতন, অত্যাচারে বিশ্বাসী নয়।