রাজধানীর মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীসের নিয়োগ অবৈধ। তিনি যে কমিটির হাতে নিয়োগ পেয়েছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেই কমিটির কোনো বৈধতা ছিল না। কমিটির সদস্যসচিবসহ আটজন সদস্যই অবৈধ ছিলেন। অবৈধ এ কমিটির মাধ্যমেই নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া গত কয়েক অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় আড়াই কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে। ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি আয়করও। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) প্রতিবেদনে সম্প্রতি এসব বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে সভাপতির পদ দেড় যুগ ধরে রাখেন ঢাকা-১৬ আসনের সাবেক এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ। এর মধ্যে ৯ বছর সভাপতি ছিলেন তিনি। সরকারি আইনে একসময় প্রত্যক্ষভাবে তিনি ক্ষমতা ছাড়লেও নেতৃত্বে বসান তার স্ত্রী ফরিদা ইলিয়াসকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির বিভিন্ন কার্যক্রম চলে অবৈধভাবে।
জানা গেছে, এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির জমিতে রয়েছে ১৭টি দোকানঘর। ২০১৯ সাল থেকে ২০২৫ পর্যন্ত এসব দোকান থেকে ভাড়া আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৩৪ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে আদায় করার কথা থাকলেও ব্যাংকে জমার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি অধ্যক্ষ। এ ছাড়াও ওই ভাড়ার ভ্যাট ও আয়কর ২৮ লাখ ৪৭ হাজার ১২৬ টাকাও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেননি প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির পুরোনো বিভিন্ন কাগজ বিক্রির ৫১ হাজার ৬০০ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এসএসসি ও এইচএসসির শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত পাঠদানের সম্মানির আয়কর বাবদ ৫ লাখ ২১ হাজার ৩৮৯ টাকাও সরকারের কোষাগারে জমা হয়নি। বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় পর্যবেক্ষকদের সম্মানি প্রদান করা হলেও এর আয়কর সরকারের কোষাগারে দেওয়া হয়নি। এতে ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪০ টাকার অনিয়ম উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলা বিচারাধীন অবস্থায় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ কমিটির মাধ্যমে ৬৩ জন শিক্ষক ও একজন সহকারী গ্রন্থাগারিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা বিধিসম্মত নয়। প্রতিষ্ঠানটির আয়-ব্যয়ের হিসাবসংক্রান্ত রেকর্ডপত্র যাচাইয়ে দেখা গেছে- ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মধ্যে ৫৬ লাখ ৩১ হাজার ৪১৬ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এসব টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে। অধ্যক্ষ আয়-ব্যয়ের সব ভাউচারও উপস্থাপন করতে পারেননি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার নিয়োগ অবৈধ নয়। আমার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষও অবৈধ ছিলেন না।
আদালতের রায়কে পাশ কাটিয়ে ডিআইএ এ প্রতিবেদন করেছে।’ তিনি বলেন, দোকানঘরের ভাড়া আদায়ের ব্যাংক রশিদ রয়েছে। আর যেসব ভ্যাট জমা দেওয়া হয়নি তা শিগগিরই সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়া হবে।