হংকংয়ে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কনসাল জেনারেল জুলি ইডেহ–কে কঠোর বার্তা দিয়েছে চীন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হংকং কার্যালয়ের কমিশনার ছুই জিয়ানচুন স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তিনি যেন হংকংয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার এক বৈঠকে ছুই ইডেহকে চারটি নিষেধাজ্ঞার কথা জানান। এগুলো হলো—যাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা উচিত নয়, তাঁদের সঙ্গে না দেখা করা; চীনবিরোধী শক্তির সঙ্গে কোনো যোগসাজশ না করা; হংকংয়ের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে এমন কার্যক্রমে অর্থ বা সহায়তা না দেওয়া এবং জাতীয় নিরাপত্তা–সংক্রান্ত মামলায় হস্তক্ষেপ না করা। বৃহস্পতিবার ছুইয়ের কার্যালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতেও এই বার্তা পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া
চীনের সতর্কবার্তা প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, মার্কিন কূটনীতিকেরা বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেন এবং এটাই কূটনীতির নিয়ম—হংকংও এর ব্যতিক্রম নয়।
ইডেহ গত আগস্টে হংকংয়ে দায়িত্ব নেন। ২০১৯ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় তিনি সেখানে মার্কিন কনস্যুলেটের রাজনৈতিক শাখার প্রধান
ছিলেন। তখন তিনি গণতন্ত্রপন্থী নেতাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান, যা নিয়ে বিতর্ক হয়। বেইজিংপন্থী সংবাদমাধ্যমগুলো তাঁকে ‘কালার রেভল্যুশনের উসকানিদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এক নিবন্ধে বলা হয়, তিনি গণতন্ত্রপন্থী নেতা জোশুয়া ওয়ং, নাথান ল–এর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন এবং গণতন্ত্রপন্থী আইনপ্রণেতা অ্যানসন চ্যান ও এমিলি লাউকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এখনো পর্যন্ত ইডেহ এ বৈঠক নিয়ে কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করেননি।
হংকংয়ের বর্তমান প্রেক্ষাপট
হংকং হলো চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল। ১৯৯৭ সালে ব্রিটেন থেকে হস্তান্তরের সময় ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ চুক্তি করা হয়। তবে সমালোচকেরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে অঞ্চলটির শাসনব্যবস্থা আরও কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছে।
২০১৯ সালের বেইজিংবিরোধী আন্দোলনের পর ২০২০ সালে চীন সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালু করে। এতে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম, সন্ত্রাসবাদ ও বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগসাজশকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ২০২৪ সালে হংকংয়ের আইন পরিষদ আরও কঠোর আইন পাস করে। এসব আইনের অধীনে অসংখ্য কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং স্বাধীন সংবাদমাধ্যম অ্যাপল ডেইলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
চীন–যুক্তরাষ্ট্র টানাপোড়েন
ছুই–ইডেহ বৈঠক দুই দেশের চলমান উত্তেজনাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও তাইওয়ান ইস্যুতে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের সম্পর্ক ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে।
বিডি প্রতিদিন/আশিক