রংপুর নগরীর জিএলরায় রোডে পান দোকান করেন আবদুল মালেক। চাল কিনে খেতে হয় তাকে। অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় তিনি দিশাহারা। আমিন মিয়া ও মাহাবুব রহমান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। চালের দাম বাড়ায় তারাও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাদের মতো হাজার হাজার নিম্নআয়ের মানুষ চালের আস্বাভাবিক দাম বাড়ায় দিশাহারা।
শুধু নিম্নআয়ের মানুষ নন, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর নাভিশ্বাস উঠেছে। এদিকে চালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কাঁচা মরিচের দাম। গত ১০ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম প্রকার ভেদে বেড়েছে ৭ থেকে ১০ টাকা। কাঁচা মরিচের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে প্রকারভেদে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
রংপুরের মাহিগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন চালের বাজারে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিন আগেও মোটা চাল বিক্রি হয়েছিল ৪৫ টাকা কেজি। সেই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজিতে। ২৯ জাতের চাল কদিন আগে প্রতি কেজি ৫২ টাকা ছিল সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকায়। ২৮ জাতের চাল ছিল ৫৬ টাকা, সেটি বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৩ টাকা, মিনিকেট জিরাসাইল কদিন আগে ছিল ৬২ টাকা। সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকায়। নগরীর মাহিগঞ্জ এলাকার চালের আড়তদার মাসুম মিয়াসহ কয়েকজন চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানান, ভারত থেকে চালের আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ধান কাটামাড়াই যখন শুরু হয় তখন অটো রাইসমিল মালিকরা তেমন একটা ধান ক্রয় করেননি। গত ১০ দিন থেকে আটো রাইসমিল মালিকরা ধান কিনে মজুত করে রাখছেন। এ ছাড়া বড় বড় ব্যবসায়ী এবং বড় কৃষকরা ধান মজুত করে রেখেছেন। ফলে বাজারে কিছুটা কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া সরকারি গোডাউনে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান চলছে। এসব কারণে চালের দাম বাড়ছে। এখন কৃষকের খেতেও ধান নেই। হাটেও তেমন একটা ধান উঠছে না।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ছোট ছোট হাসকিং মিলগুলো এখন আর চলে না। বড় অটোরাইস মিল মালিকরা ধান কিনে মজুত করে নানা অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া বড় বড় কৃষক ধান ঘরে রেখে দিয়েছেন। তারা বাজারে চাল বিক্রি করছেন না। এ সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে চালের বাজার স্থিতিশীল হবে না।
জানা গেছে, নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় প্রতি বছর অর্ধ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থাকে। এর পরও এ অঞ্চলের চালের দাম কমছে না। এখন বোরো ধানের ভরা মৌসুম। এ মৌসুমে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে চালের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে।