রাজশাহীর নওহাটা পৌরসভায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার কাজে দেখা দিয়েছে চরম অচলাবস্থা। কাজ ফেলে রেখেছেন ঠিকাদার। ফলে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তিন দফায় সময় বাড়িয়ে দেওয়ার পরও শেষ হয়নি কাজ। অথচ পৌর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই সাড়ে ১৪ কোটি টাকার বেশি বিল পরিশোধ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ওয়াসিমুল হক বলেন, ‘প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি এবং বিল প্রদান সম্পূর্ণরূপে পৌরসভা প্রকৌশল বিভাগের পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন ও সুপারিশের ভিত্তিতে অনুমোদিত। আমরা কোনো বিল পাইনি, যা কাজের বিপরীতে নয়। যেসব কাজ হয়েছে তারই বিল প্রক্রিয়াভুক্ত হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং স্থানীয় বিরোধের কারণে কাজের গতিতে বিঘ্ন ঘটছে।’
পৌরসভা সূত্র জানায়, নওহাটার রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কারের দায়িত্ব পায় জুয়েল ইলেকট্রনিক্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর স্বত্বাধিকারী রাজশাহীর ভুগরইল এলাকার বাসিন্দা ওয়াসিমুল হক। ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। মেয়াদ ছিল এক বছর। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে সর্বশেষ গত ২৭ মে এক মাস সময় দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তিনি কাজ শেষ করতে পারেননি। অথচ তাকে তিন দফায় ১৪ কোটি ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৬৩৭ টাকা বিল পরিশোধ করেছে পৌরসভা।
পৌরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সর্বশেষ গত মে মাসে এক মাসের সময়সীমা দেওয়া হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও নানা অজুহাতে কাজগুলো শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কার্যসম্পাদন জামানত বাজেয়াপ্তসহ নতুন ঠিকাদার নিয়োগের চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে পৌর এলাকার দুয়ারি থেকে পাকুড়িয়া স্কুল পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তার একাংশে সুরক্ষা দেয়ালের প্রায় ৩০ মিটার ধসে পড়েছে। দেয়ালটির অর্ধেকের বেশি অংশ পুকুরে নেমে যাওয়ায় ওই পথ দিয়ে চলাচলকারী কয়েক হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। পরে ইউএনওর হস্তক্ষেপে বালু ও মাটি ফেলে রাস্তাটি সাময়িকভাবে চলাচলের উপযোগী করা হয়। ওই প্রকল্পে বরাদ্দ আছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ৮ হাজার ৯১৭ টাকা। বাগধানি এলাকায় ৫০০ মিটার রাস্তার সংস্কার কাজ এক বছর আগে শুরু হলেও অর্ধেকের বেশি এখনো শেষ হয়নি। পুরোনো রাস্তার ওপরের অংশ তুলে ফেলায় বৃষ্টিতে পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমি বলেন, ‘আমি সদ্য দায়িত্ব নিয়েছি। বিল পরিশোধের বিষয়টি পুরোপুরি জানি না। তবে অতিরিক্ত বিল দেওয়া হয়ে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঠিকাদারকে তিন দফা সময় দিয়েও কাজ শেষ না করায় পৌরবাসীর মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। প্রয়োজনে জামানত বাজেয়াপ্ত করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।’