বাংলাদেশে শিশু নির্যাতন পরিস্থিতি বর্তমানে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। শিশু নির্যাতন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে যা ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) দেশের পাঁচটি জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র (ইত্তেফাক, প্রথম আলো, নয়া দিগন্ত, ডেইলি স্টার ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড) এর প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনা করে জানা যায়।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ কালে দেখা যাবে শিশুরা নানা প্রকারের যৌন নির্যাতন, যৌন হয়রানি, শারীরিক নির্যাতন ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এর বড় অংশের শিকার হচ্ছে-মেয়ে শিশু। উক্ত সময়ে শিশু নির্যাতনে মৃত্যুর সংখ্যা-১৯৩৩, ধর্ষণ-২৭৪৪, নির্যাতন-২১৫৯। এছাড়া, শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত প্রায় ১ লাখ ৫১ মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে যা ক্ষতিগ্রস্ত শিশু ও তার পরিবারের জন্য মারাত্মক দুর্ভোগ বয়ে আনছি।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম ও বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের যৌথ আয়োজনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বাংলাদেশের বর্তমান শিশু নির্যাতন পরিস্থিতি তুলে ধরেন বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের চেয়ারপার্সন ড. হামিদুল হক।
ড. হামিদুল হক জানান, এসব নির্যাতন যেমন পরিবারের বাইরে হচ্ছে, তেমনি পরিবারের অভ্যন্তরেও কিছু নির্যাতনের ঘটনাও সংঘটিত হচ্ছে। যে সকল শহরে শিশু নির্যাতনের মাত্রা বেশি সেই সকল বিশেষ করে জেলা শহরগুলোতে পরিবার, কমিউনিটি সদস্যদেরকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো ও স্কুল ভিত্তিক সচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। সেই সাথে বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও শিশু আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হতে হবে। সবার আগে শিশুর অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রে অনেক সময় সঠিক সংবাদ ও সময়মতো যথাযথ সহায়তাও পাওয়া যায় না। সে বিষয়েও সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। লক্ষ্য হবে একটাই; দেশের একটি শিশুও যেন কোন ধরনের শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার না হয়।
এতে আরো বক্তব্য রাখেন শিশু অধিকার ফোরামের ভাইস চেয়ারপার্সন ও বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের মহাসচিব খায়রুজ্জামান কামাল, বাংলাদেশ সু কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক নাসির ইকবাল জাদু, বি এস এ এফ এর কোসাধ্যক্ষ ও বিইউকে এর নির্বাহী পরিচালক কাজী শামসুল আলম, বি এস এ এফ এর নির্বাহী সদস্য ও নারী উন্নয়ন শক্তির নির্বাহী পরিচালক ড. আফরোজা পারভীন এবং বি এস এ এফ এর নির্বাহী সদস্য পরিচালক খন্দকার রিয়াজ হোসেন।
ড. আফরোজা পারভীন তার উপস্থাপনায় বাংলাদেশে একটি শিশু অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশে শিশুদের অধিকার সুরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, নিরাপত্তা ও সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে একটি স্বতন্ত্র শিশু অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। এ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিশুদের জন্য কেন্দ্রীভূত নেতৃত্ব, জবাবদিহিতা এবং সুসংহত নীতি গ্রহণ সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের নির্বাহী পরিষদের সদস্যগণ বলেন, শিশু অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা হলে বাংলাদেশে শিশু অধিকার রক্ষা, কল্যাণ ও উন্নয়নের কার্যক্রম হবে আরও কার্যকর, সমন্বিত ও জবাবদিহিমূলক।
এ সময় বক্তাগণ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও শিশুর অধিকার ও সুরক্ষায় জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের পূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিশুর ওপর সকল ধরনের সহিংসতা বন্ধে সরকারের প্রতি জোরালো দাবি তুলে ধরেন। সেই সাথে একটি শিশু বাস্তব সমাজ গঠনের প্রতি সকলকে একাত্ম হয়ে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত