ঈদের ছুটিতে দীর্ঘদিন পর জমে উঠেছে চট্টগ্রামের বিনোদন কেন্দ্রগুলো। ঈদুল আজহার প্রথম দিন দর্শনার্থী কম থাকলেও দ্বিতীয় দিন থেকে বাড়তে শুরু করেছে। সকাল থেকেই নগরবাসী পরিবার-পরিজন নিয়ে বেরিয়ে পড়েন নানা বিনোদনকেন্দ্রে।
চট্টগ্রাম নগরীর ফয়’স লেক, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, নেভাল বোট ক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। তবে শিশুদের বেশিরভাগই ভিড় করেছে বিভিন্ন শপিংমলের কিডসজোনে। পর্যাপ্ত শিশুবান্ধব পর্যটক কেন্দ্র না থাকার কারণে ইট পাথরের কৃত্রিম বিনোদন নিতে দেখা গেছে শহুরে শিশুদের।
জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরের বুক চিড়ে জেগে ওঠা ফয়’সলেকের প্রাকৃতিক পরিবেশে আধুনিকতার সম্বনয়ে গড়ে ওঠা অ্যামিউজমেন্ট পার্কে দর্শনার্থীর সমাগম শুরু হয়েছে ঈদের দিন দুপুর থেকে। তবে ঈদের দিন মানুষের আনাগোনা কিছুটা কম থাকলেও দ্বিতীয় দিনে ভিড় ছিল লক্ষণীয়। ফয়’স লেকের থোকা থোকা সবুজ পাহাড়ের বুক চিড়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের আঁকাবাঁকা হ্রদে নৌ ভ্রমণ করছে অনেকেই যাদের বিভিন্ন রাইডে চড়ার আগ্রহ কম।
বেশীর ভাগ দর্শনার্থী এসেছেন চট্টগ্রামের ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ডের কৃত্রিম ঢেউয়ে সামদ্রিক স্বাদ নিতে, এছাড়াও জলকেলী উৎসবে মেতে উঠতে নানা রকম রাইড উপভোগ করতে। প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা বেইসক্যাম্প এ্যাডভেঞ্চার নিতে এসেছে প্রকৃতি ভ্রমণ পিপাসুরা। অ্যামিউজমেন্ট পার্কের নতুন ছয়টি রাইডসহ সবখানেই মুখরিত হয়ে উঠে দর্শনার্থীদের আনাগোনায়।
লম্বা ছুটির কারণে দূর দূরান্ত থেকে ফয়'স লেক রির্সোটে এসেছেন অনেকে। বিশেষ করে শিশুদের আনন্দ ছিল চোখে পড়ার মতো। নানা রঙের পোশাকে বাবা-মায়ের হাত ধরে ছুটে বেড়িয়েছে পার্কের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। রাইডগুলোতে ছিল দীর্ঘ লাইনের ভিড়, আর চিড়িয়াখানায় প্রিয় প্রাণীদের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার উৎসব।
ফয়’স লেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, কোরবানির ছুটিতে পরিবার নিয়ে একটু সময় কাটানোর জন্য এসেছি। বাচ্চারা দারুণ আনন্দ করছে। লম্বা ছুটি হওয়ার কারণে কর্মস্থলে যাওয়ারও তাড়া নেই। ফলে দীর্ঘদিন পর পরিবারকে নিয়ে ঘুরতে পেরে ভালো লাগছে।
এছাড়াও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়। সমুদ্র সৈকতে বসে কাঁকড়া খেয়ে খেয়ে গল্প করছেন তরুণ-তরুণীরা। আবার যারা পরিবার নিয়ে এসেছেন তারা মেতে উঠেছেন ছবি তোলার উৎসবে।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে আসা আবদুচ সোবহান বলেন, অনেকদিন পর এমন খোলা পরিবেশে এসে মনটা জুড়িয়ে গেল। সবাই মিলে ছবি তুলছি, গল্প করছি, একসঙ্গে সময় কাটাচ্ছি—এটাই ঈদের আনন্দ। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ছিল প্রাণবন্ত পরিবেশ। বাঘ, সিংহ, হরিণ, বানরসহ বিভিন্ন পশুপাখি দেখতে শিশুদের মাঝে ছিল প্রবল আগ্রহ। একাধিক পরিবার জানায়, পশু-পাখির প্রতি শিশুদের আগ্রহকে কেন্দ্র করে তারা এখানে ঘুরতে এসেছেন।
এদিকে নগরীর বিভিন্ন শপিংমলে গড়ে উঠেছে শিশুদের জন্য কৃত্রিম বিনোদন কেন্দ্র। যেখানে শিশুরা রাইডসহ নানা খেলনা নিয়ে মেতে উঠেছেন আনন্দে। নগরীর বালি আর্কেডের কিডস জোন, কাজীর দেউড়ি স্যামস প্লে জোনসহ নগরীর বেশিরভাগই কিডস জোনে পরিবার নিয়ে শিশুরা মেতে উঠেছেন। সুস্মিতা বড়ুয়া নামে এক অভিভাবক বলেন, শিশুদের নিয়ে ঘুরার মতো মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য তেমন কোন স্পট নেই। যার কারণে আবদ্ধ দেয়ালের ভিতরের এসব কিডস জোনে শিশুদের নিয়ে আসতে হচ্ছে। ওপেন জোনে যদি শিশুদের জন্য বিনোদন উপযোগী স্পট থাকতো তাহলে এখানে আসতে হতো না।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম