জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কোনোরূপ পূর্বানুমতি ছাড়াই প্রায় ৫০টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এতে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ভবনের উত্তর পাশে অবস্থিত বনাঞ্চলে এ ঘটনা ঘটেছে।
শিক্ষার্থীদের বাধা উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ১,৪৪৫ কোটি টাকার অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করার জন্য কাজগুলো কাটা হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে অংশীজনদের ‘উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন বিষয়ক’ আলোচনা চলাকালে কাউকে না জানিয়ে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
গাছ কাটার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, এতগুলো গাছ কাটা হয়েছে, সেটি জানতাম না। আমার কোনো অনুমতি ছাড়াই এটা করা হয়েছে। আমরা আগেই জানিয়েছি যে, মাস্টারপ্ল্যান দৃশ্যমান না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্মাণকাজ চলবে না। সেই প্রক্রিয়া এখনও চলমান। আমরা শিগগিরই মাস্টারপ্ল্যান তৈরির জন্য দরপত্র আহ্বান করব।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা ওখানে গাছ কাটার অনুমতি দেইনি। নির্মাণ কোম্পানি আমাদের না জানিয়ে কাজ শুরু করেছে।
কোম্পানি বিনা অনুমতিতে কাজ শুরু করতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এদিকে, বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থলে কোনোরকম পরিকল্পনা ছাড়া গাছ কাটার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারা।
জাবি ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উপাচার্য ও প্রকল্প পরিচালক কাউকে না জানিয়ে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসের ভেতরে গাছ কেটে ফেলতে পারে? জবি প্রশাসন মূলত ভণ্ডামিপূর্ণ আচরণ করছে। তারা মুখে আমাদের বলছে মাস্টারপ্ল্যানের অগ্রগতি ছাড়া নির্মাণ কাজ শুরু হবে না। কিন্তু ঠিকই অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান প্রশাসনও আগের প্রশাসনের মতো শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে উপেক্ষা করে গাছ কাটার মাধ্যমে একই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুত মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করতে হবে।
জাবির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী অরিত্র সাত্তার বলেন, ওই এলাকায় শিয়াল তার শাবকদের নিয়ে বসবাস করে। জঙ্গল ক্যাট ও ফিশিং ক্যাটের মতো দুর্লভ প্রাণীরও উপস্থিতি ছিল এখানে। ক্যাম্পাসে প্রাণ-প্রকৃতি যেখানে ধ্বংসের পথে... সেখানে বনাঞ্চলের ওই জায়গাটুকু ছিল বন্য-প্রাণীদের শেষ আশ্রয়। এখন সেটিও কেটে ফেলা হয়েছে। এভাবে চললে ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।
এ বিষয়ে জরুরি প্রশাসনিক বৈঠক ডেকে ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
উল্লেখ্য, গত ৮ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জাবি কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দিয়ে মাস্টারপ্ল্যানের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক জবাব চাওয়া হয়। পরে ১৩ মে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সব ধরনের নির্মাণকাজ মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নিতে হবে বলে নির্দেশনা দেয়।
এছাড়া, অপরিকল্পিতভাবে গাছ কেটে ভবন নির্মাণ বন্ধ এবং উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে জাবিতে আন্দোলন করে আসছেন ‘জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে গত ২০ মে’র মধ্যে মাস্টারপ্ল্যানের টেন্ডার আহ্বানসহ দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখানো হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয় জাবি প্রশাসন। তবে এক মাস পেরিয়ে গেলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
বিডি প্রতিদিন/কেএ