“আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, এটি এক জঘন্য অপরাধ ও মহাপাপ”—এ বার্তা ছড়িয়ে দিতে যশোরের মনিরামপুরে একটি জনসচেতনতামূলক সমাবেশ ও শপথ কর্মসূচির আয়োজন করে বসুন্ধরা শুভসংঘের বন্ধুরা। বৃহস্পতিবার মনিরামপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
উপজেলা বসুন্ধরা শুভসংঘের সভাপতি এসএম হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান আকাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রভাষক কামরুজ্জামান, আল মাহমুদ, মো. রিপন আলী, মো. রাশেদুল ইসলাম, মো. ইসরাফিল হোসেন, মো. টিটন হোসেন, দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি মোহাম্মদ বাবুল আকতার এবং শিক্ষার্থী মালিহা মেহনাজ বিভা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আত্মহত্যা মানব সমাজের জন্য এক ভয়াবহ ব্যাধি। এটি কেবল একজন ব্যক্তির জীবনকেই শেষ করে না, বরং তার পরিবার ও সমাজে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে। এটি কোনো সমস্যার সমাধান নয় বরং এক জঘন্য অপরাধ এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একটি মহাপাপ।
তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আত্মহত্যার প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, যা আমাদের সবাইকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলছে। অনেকেই ভাবেন আত্মহত্যা তাদের সমস্যার একমাত্র সমাধান। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এটি কেবল নতুন সমস্যার সৃষ্টি করে। একজন আত্মহননকারী তার যন্ত্রণার অবসান ঘটালেও রেখে যান পরিবার ও প্রিয়জনদের জন্য আজীবনের কষ্ট ও শোক।
আর্থিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে পরিবারগুলো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বক্তারা উল্লেখ করেন, প্রায় সব ধর্মেই আত্মহত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ইসলাম ধর্মে আত্মহত্যাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং এর পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।’ (সূরা নিসা, আয়াত ২৯)
তেমনিভাবে, হিন্দু ধর্ম, খ্রিস্ট ধর্ম এবং অন্যান্য ধর্মেও আত্মহত্যাকে পাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ, জীবন স্রষ্টার দান এবং তা কেবল তিনিই কাড়তে পারেন।
বক্তারা বলেন, আত্মহত্যার পেছনে হতাশা, বিষণ্নতা, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি মানসিক রোগ অন্যতম কারণ। পারিবারিক কলহ, বিচ্ছেদ, নির্যাতন, পরিবারের সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্নতা—এসব বিষয় ব্যক্তি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। বেকারত্ব, ঋণের চাপ, ব্যবসায় বা চাকরিতে ব্যর্থতা, পরীক্ষায় খারাপ ফল, প্রেমে ব্যর্থতা, প্রতারণা, সাইবার বুলিং, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা শারীরিক অসুস্থতাও আত্মহত্যার কারণ হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে আত্মহত্যা প্রতিরোধে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন, পারিবারিক সহায়তা, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার বিস্তার, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা জরুরি।
বক্তারা সবাইকে আহ্বান জানান—“আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, এটি একটি জঘন্য অপরাধ এবং মহাপাপ। জীবন সৃষ্টিকর্তার অমূল্য উপহার, যার যথাযথ মূল্য দিয়ে বেঁচে থাকা আমাদের দায়িত্ব। আসুন, আমরা সকলে আত্মহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হই এবং হতাশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই। প্রতিটি জীবনই মূল্যবান এবং তা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের।”
বিডি প্রতিদিন/আশিক