কাদুটি, পাইকের করতলা, চাঁদসার ও লনাই। এই চারটি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বরুড়া সীমান্তবর্তী গ্রাম। এখানে প্রায় শত বছর ধরে পানের চাষ হচ্ছে। পান চাষে গ্রাম গুলোতে এসেছে রঙিন সমৃদ্ধি। সবচেয়ে বেশি পান চাষ হয় কাদুটি গ্রামে। এই গ্রামের ৮০ভাগ মানুষ পান চাষি,ব্যবসায়ী ও শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। এখানে মহালনী, চালতাগোটা ও সাচি জাতের পানের চাষ হয়। এদিকে কুমিল্লাসহ সারা দেশে উৎসব- আড্ডা, চা দোকান আর গৃহস্তের বাড়িতে পান খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের টুকরোতে খুব যত্নে বেড়ে উঠেছে পানের চারা। সবুজ পান চারায় হাসছে পুরো জমি। ওপরে দেয়া হয়েছে খড়ের হালকা ছাউনি। যার ফাঁক দিয়ে হালকা সোনালি আলো পানের পাতায় পড়ে লুকোচুরি খেলছে। পানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে পরামর্শ দিচ্ছেন স্থানীয় উপসহকারী কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ।
কাদুটি গ্রামের ইউনুছ মিয়ার জমিতে গিয়ে দেখা গেছে, তিনি পান চিবুতে চিবুতে কাজ করছেন। পানের লতা বাঁশের খুঁটির সাথে বেঁধে দিচ্ছেন। তার সাথে কয়েকজন শ্রমিকও কাজ করছেন। এদিকে গ্রামের কাদুটি বাজারে প্রতি শনিবার ও সোমবার হাট বসে। পানের লতা বাঁধা শেষে পান তোলা শুরু করেন কৃষক ও শ্রমিকরা। পানের বোটা ভাঙ্গার টুসটুস শব্দে জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর একটা মাচার নিচে নিয়ে পানের ভিড়া(৯৬টা পান একত্র করা) করেন।
কৃষক ইউনুছ মিয়া বলেন, এক একরের বেশি জমিতে পান চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে সাড়ে আট লাখ। বিক্রি দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। এছাড়া একটা জমিতে একবার পান লাগালে তা ১০ বছর বা তারও বেশি দিন ফলন দেয়।
কৃষক আবুল বাশার বলেন, আমাদের কাদুটি গ্রামের ৮০ভাগ মানুষ পান চাষে জড়িত। এই পান ১৫দিন পর পর উঠানো হয়। পান চাষের কারণে এলাকায় মানুষ সচ্ছল হয়েছে। এই গ্রামের পান কাদুটি, নবাবপুর, গৌরিপুর, সাচার, বদরপুরসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়। আগে পানের ভিড়া ২০০-২৬০টাকার বেশি বিক্রি হতো, এখন তা ১২০টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কৃষক কামাল হোসেন বলেন, ৩০শতকে চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে তার। ভালো লাভ পেয়েছেন। এখন পানের দাম কমায় তারা বেকায়দায় পড়েছেন।
ব্যবসায়ী রমিজ মিয়া বলেন, যে পান ৩০০টাকা বিক্রি হতো, এখন তা ১০০ টাকা হয়েছে। লেবার ও অন্যান্য খরচ বাড়ায় কৃষকরা বেকায়দায় পড়েছেন।
পাইকারি ব্যবসায়ী মিন্টু চন্দ্র দত্ত বলেন, কাদুটি, ঝলম, মাধাইয়া ও বদরপুরসহ বিভিন্ন হাট থেকে তিনি পান ক্রয় করেন। এখানের পান বিভিন্ন উপজেলায় যায়। এই পানের স্বাদ চমৎকার।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বলেন, এটির রোগ কম, ফলন হয়েছে। উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষক দাম কম পাচ্ছেন। কিছুদিন পর সে সমস্যা কেটে যাবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মুহাম্মদ মোরশেদ আলম বলেন, চান্দিনা উপজেলায় ৪২ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। কাদুটিতে হয় ১২ হেক্টর জমিতে। এক বিঘা জমিতে খরচ ৩লক্ষ টাকা, বিক্রি হয় সাড়ে ছয় লাখ টাকা। এটি ছায়া জাতীয় ফসল। সরাসরি আলো পড়লে ফলন ভালো হয় না। বৃষ্টি বেশি হওয়ায় এবার উৎপাদন ভালো। এজন্য এখন একটু দাম কম। তবে সামনের শীতে দাম আরো বাড়বে। চান্দিনায় আরো পান চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন