ফেনীতে সুপেয় পানি ও ফসলি জমির সেচের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিকল্প না থাকায় গ্রামে-গ্রামে চরম জনদুর্ভোগ শুরু হয়েছে। দু'মাসের অধিক ভুগর্ভস্থ পানি না উঠায় অকেজো হতে পারে জেলার ৫০ হাজার গভীর নলকূপ। বৃষ্টি একমাত্র সমাধান বলে জানিয়েছেন জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী।
সরজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু এই বাড়ি নয় আশপাশের অধিকাংশ বাড়ির নলকূপে মিলছে না সুপেয় পানি। যার ফলে সুপেয় পানি, রান্না-বান্না ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের পানি নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। খাবার পানি ও রান্নাবান্নার পানি দূর-দূরান্ত থেকে আনতে দেখা যায়।
ফুলগাজীর আমজাদহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা কাজী মহিউদ্দিন বলেন, গ্রীষ্মকাল আসলে বাড়ির অধিকাংশ টিউবওয়েলের পানি ওঠে না। সকল কাজের জন্য পানির প্রয়োজন হয়। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের।
সদর ইউনিয়নের নিলখী গ্রামের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, বাড়ির আশপাশের টিউবওয়েলের একটিতেও মিলছে না সুপেয় পানি। তাই বাড়ির নারী-পুরুষ সকলের খাবার পানি ও রান্নাবান্নার পানি সংগ্রহে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। তারা পাশের সিলোনিয়া নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে সেগুলো রান্নাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন।
একই গ্রামের ৬০ ঊর্ধ্বে নারী খায়েরেন্নেছা পুষ্প বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এ সময় আমরা পানির জন্য কষ্ট করি। নামাজ পড়ার জন্য অজু যে পানি সেটি অন্যস্থান থেকে আসতে হয়। কলগুলো নষ্ট পানি উঠে না। দুঃখে কষ্টে জীবন কাটছে।
ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, বাজারে ৩টি চাপাকল ও ১০/১২টি পানি তোলার মোটর রয়েছে। এসব চাপাকল ও পানির মোটর থেকে পানি ওঠে না। এছাড়া আশেপাশে অনেক টিউবওয়েলেও পানি উঠে না।
কাজিরবাগ ইউনিয়নের রানীর হাট এলাকার কৃষক দিদারুল আলম জানান, আমাদের নিজস্ব জমিগুলোতে এবার স্কিমধানের চাষ করেছি কিন্তু পানির অভাবে ধানের থোর্ড় এখন ভুষি হয়ে যাচ্ছে। পুকুর, জলাশয়ের ও খালের পানি শেষ হওয়ায় সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। পানির অভাবে ফসল উৎপাদনে চরম সংকট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।
ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর এলাকার খোকন চন্দ্র পাটোয়ারী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরের গভীর নলকূপটি তিন বছর যাবত নষ্ট পানি ওঠে না। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। সরকার যদি বিকল্প ব্যবস্থা করে সমস্যার সমাধান করে তবে জনগণ উপকৃত হবে।
পরশুরামের কৃষক আহাদ মিয়া বলেন, ২ একর জমিতে ধান করেছেন। কিন্তু পানির না পাওয়ার কারণে সব ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আশপাশের নদী-নালা-খাল-বিল সব শুকিয়ে গেছে। কোথাও পানি নেই।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ফেনী জেলায় সরকারি নলকূপের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৮১১টি। এর মধ্যে ৯ হাজার ৮৭১টি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। চালু থাকা ২৬ হাজার ৯৪১টি নলকূপের প্রায় অর্ধেক থেকে বর্তমানে পানি উঠছে না। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপিত প্রায় দুই লক্ষাধিক অগভীর নলকূপেরও অধিকাংশে পানি মিলছে না।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি কাজে ভূর্গস্থ পানির অধিক উত্তোলনের ফলে প্রতি বছর পানির লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছে। যার ফলে শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ নলকূপে পানি উঠে না। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য ব্যাপকহারে ভূ-গর্ভস্থ পানির উত্তোলন কমাতে হবে, কৃষি কাজে ভূ-উপরিভাগের পানিকে কাজে লাগাতে হবে। ৫ মাস বৃষ্টি না হওয়ায় পানির লেয়ার নিচে নেমে গেছে। এবার জেলার ৬টি উপজেলার অগভীর নলকুপের মধ্যে ৭০ ভাগ এবং গভীর নলকূপের মধ্যে ২০ ভাগের পানি উঠছে না। বিকল্প ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না, এজন্য জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। এখন শুধু বৃষ্টিই একমাত্র ভরসা।
বিডি প্রতিদিন/এএ