‘ড্রোন শো’ ট্রেন্ড
উৎসব থেকে বিবাহ- আজকের বিশ্বে যে কোনো আয়োজনের চমক ড্রোনের লাইটিং শো। এক সময় এটি বিরল হলেও এখন প্রযুক্তির চটকদার আয়োজনে মেতে ওঠেন ব্যক্তিগত থেকে করপোরেট সবখানে...
আজকের বিশ্বে ‘ড্রোন শো’ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একসময় বিরল হলেও এখন জন্মদিন পার্টি, বিবাহ অনুষ্ঠান, করপোরেট ইভেন্ট, এমনকি বড় বড় ক্রীড়া ইভেন্ট এবং জাতীয় আয়োজন পর্যন্ত এ আয়োজনের দেখা মিলছে। কিছু থিম পার্কেও ড্রোন শো-এর আয়োজন করা হয়, যা অতিথিরা দারুণ উপভোগ করেন।
২০২৪ সালে গ্লাস্টনবেরি মিউজিক ফেস্টিভ্যাল তাদের প্রথম ড্রোন শো আয়োজন করেছিল, যা যুক্তরাজ্যের ড্রোন শো কোম্পানি সেলেস্টিয়াল পরিচালনা করেছিল। তা ছাড়া বর্তমান বিশ্বে রেকর্ড-ব্রেকিং প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গত অক্টোবরে চীন সবচেয়ে বড় ড্রোন শো-এর আয়োজন করে। এতে মোট ১০ হাজার ২০০টি ড্রোন ব্যবহার করা হয়। তারা ঠিক তার আগের মাসের একটি রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। তাহলে কি এর অর্থ হলো- আতশবাজির দিন শেষ? লেজার ‘শো’-এর দিন শেষ?
যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ড্রোন গার্ল নামে পরিচিত স্যালি ফ্রেঞ্চ বলেন, ‘এগুলো সত্যিই সুন্দর।’ তিনি বলেন, আজকাল বেসবল খেলা, করপোরেট সামিট এবং এমনকি বন্দরেও ক্রুজ উদ্বোধন উদ্যাপন করতে ড্রোন শো দেখা যাচ্ছে। ড্রোন ডিসপ্লেগুলো অত্যন্ত পরিশীলিত হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, ড্রোন শোতে হাজার হাজার ডিভাইস থাকে, যা তাদের বিস্তারিত চিত্র বা প্যাটার্ন অ্যানিমেটেড করে। দ্য ড্রোন গার্ল বলেন, ‘তবে একটি বাধাও আছে। এর খরচ ব্যয়বহুল। ড্রোন শো সফটওয়্যার ফার্ম এসপিএইচ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিল্প ডেটা উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের বাজারে প্রতি ড্রোনের খরচ প্রায় ৩০০ ডলার। ৫০০ ড্রোনের শোতে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার ডলারের বেশি খরচ গুনতে হয়।’
স্কাইম্যাজিক, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ড্রোন শো কোম্পানি। প্যাট্রিক ও’ম্যাহোনির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। তিনি বলেন, আকাশ আসলেই সীমাহীন। আমরা ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি খরচে তৈরি বড় বড় ডিসপ্লে পরিচালনা করছি। আমাদের শো বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ২০২৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার কোচেল্লা মিউজিক ফেস্টিভ্যাল। কোম্পানিটি যুক্তরাজ্যেও ড্রোন শো পরিচালনা করেছে। যার মধ্যে রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানও ছিল। ও’ম্যাহোনির ভাষ্য, ড্রোন আউটডোর পাবলিক ডিসপ্লেতে এক বিপ্লব এনেছে। তার কোম্পানির ৬ হাজার কাস্টম-ডিজাইন করা ড্রোনের ফ্লিট রয়েছে। যা প্রতি সেকেন্ডে ১০ মিটার পর্যন্ত গতিতে ছুটতে পারে। ড্রোনগুলোয় এলইডি লাইট রয়েছে ও ২৫ মিনিটের ফ্লাইট টাইমের জন্য ব্যাটারিও রয়েছে। যা সহজে পরিবহনযোগ্য, এগুলো ড্রোনকে ফ্লাইট কেসে সংরক্ষণ করে এবং ভেন্যুতে এক বিশাল মারকুইতে খুলে ফেলা হয়, এরপর সেগুলোকে টেকঅফ এলাকায় আধামিটার দূরত্বে একটি গ্রিড প্যাটার্নে সাজানো হয়। ও’ম্যাহোনি যোগ করে বলেন, একবার ড্রোনগুলো ‘গো’ কমান্ড পেয়ে গেলে [তারা] পুরো শোটি উড়িয়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, ‘মাটিতে একজন পাইলট হাজার হাজার ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করেন।’ ড্রোনগুলো গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) ডেটার ওপর ভিত্তি করে জিও-ফেন্সড করা হয়, যা তাদের নির্ধারিত ফ্লাইট এলাকার বাইরে যেতে বাধা দেয়। তবে বাতাসের পরিস্থিতিতে তারা পথচ্যুত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাটিতে অবতরণ স্থানে ফিরেও আসে। আতশবাজির ‘বুম’ ফ্যাক্টর রয়েছে। যা পরিবেশে প্রভাব ফেলে। ড্রোনে এগুলো থাকে না। তবে বাজার গবেষণা সংস্থা গার্টনারের বিশ্লেষক বিল রে বলেন, কিছু ড্রোন এখন পাইরোটেকনিক্স চালু করে, যা আতশবাজির মতো প্রভাব ফেলে।
ড্রোন শো অ্যানিমেশনসের প্রধান নির্বাহী পেদ্রো রোসারিও বলেন, তার কাজের চ্যালেঞ্জিং দিক হলো এমন ডিসপ্লে তৈরি করা, যা ড্রোন ফ্লাইটের বিধিনিষেধ মেনে চলে, কারণ এই নিয়ম এক এক দেশে একেক রকম। উদাহরণস্বরূপ, ইংল্যান্ডে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর চেয়ে কঠোর নিয়মকানুন রয়েছে। রোসারিও আরও বলেন, ড্রোন শো, যা পাইরোটেকনিক্স, ঐতিহ্যবাহী আতশবাজি বা এমনকি লেজারের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, ফলে ড্রোন শো সৃজনশীল স্বাধীনতার একটি বিশাল সুযোগ এনে দেয়।
তথ্যসূত্র : বিবিসি