শ্রীলঙ্কা সফরের শুরুটা দারুণ করেছিলেন টাইগাররা। ড্র করেছিল গল টেস্ট। কলম্বো টেস্টে ছন্দ হারায়। সেই ছন্দহীন পারফরম্যান্সের দেখা মেলে ওয়ানডে সিরিজে। একটি ওয়ানডে জিতেছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজরা। কিন্তু সিরিজ জিততে পারেনি ব্যাটিং ব্যর্থতায়। ছন্দ হারানো পারফরম্যান্স চোখে পড়ে টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচেও। লিটন বাহিনী সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে অবশ্য ঘুরে দাঁড়ায়। দুরন্ত পারফরম্যান্সে টানা জয়ে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতে ইতিহাস লেখেন লিটনরা। টি-২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত নেতৃত্বের দায়িত্ব পাওয়া লিটন টানা দুই সিরিজ হারের ধাক্কা সামলে অবশেষে জয়ের উচ্ছ্বাসে ভেসেছেন। দ্বীপরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ জেতার উচ্ছ্বাস নিয়ে দেশে ফিরেছে লিটন বাহিনী। অথচ দ্বীপরাষ্ট্রের মাটিতে টানা খেলার ক্লান্তি জুড়ানোর সময় পাননি। ঘরের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ খেলতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগামীকাল মিরপুরে প্রথম টি-২০ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। সন্ধ্যা ৬টায় শুরুর ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের মোমেন্টাম ধরে রাখার কথা বলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ, ‘যেহেতু একটি উইনিং মোমেন্টাম নিয়ে এসেছি, সেটা ধরে রাখার চেষ্টা করব। ঘরের মাঠে খেলা। যদিও উইকেট দেখা হয়নি। অতীতে কি হয়েছে, সেটা আমরা ভুলে যেতে চাই। আমাদের একটা ভালো মোমেন্টাম রয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে সেটা ধরে রাখতে চাই।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে এবার সপ্তমবার টি-২০ সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে খেলবে চতুর্থ সিরিজ। আগের ছয় সিরিজের ৫টিই জিতেছে পাকিস্তান। ২০১৫ সালে এক ম্যাচের সিরিজটি জিতেছিলেন টাইগাররা। ২০১১ সালে প্রথমবার বাংলাদেশে টি-২০ ম্যাচ খেলে পাকিস্তান। এর আগে অবশ্য ২০০৭ সালে পাকিস্তানের মাটিতে খেলেছিলেন টাইগাররা। দুটি সিরিজই হেরে যায় টাইগাররা। ২০১৫ সালে সাব্বির রহমান রুম্মন ও সাকিব আল হাসানের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেটে জয় পায়। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম জয়। এরপর ২০২০ সালে টাইগাররা পাকিস্তান সফরে যান ৩ ম্যাচের সিরিজ খেলতে। লাহোরে দুই ম্যাচ হলেও একটি হতে পারেনি। সিরিজটি ২-০ ব্যবধানে জেতে স্বাগতিকরা। ২০২১ সালে ৩ ম্যাচের সিরিজ খেলে টাইগারদের হোয়াইটওয়াশ করে। সব ম্যাচই হয়েছিল মিরপুরে। চার বছর পর দুই দল ফের মিরপুরে টি-২০ সিরিজ খেলবে। ঘরের মাঠ বলে টাইগাররা কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাবে বলেন বাঁ হাতি ব্যাটার নাঈম, ‘মিরপুর আমাদের পরিচিত মাঠ। এখানকার উইকেট সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। কিছুটা সুবিধা তো পাব।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত টি-২০ ম্যাচ খেলেছে ২২টি। জয় সাকল্যে তিনটি। ২০১৫ সালে ৭ উইকেটে এবং ২০১৬ সালে টি-২০ এশিয়া কাপে জিতেছিল ৫ উইকেটে। এ ছাড়া ২০২৩ সালে হ্যাংঝু এশিয়াতে ৬ উইকেটে জিতেছিলেন টাইগাররা। শ্রীলঙ্কা সিরিজ দিয়ে নাঈম শেখ টি-২০ খেলার সুযোগ পান ৩৫ মাস পর। প্রথম ম্যাচে ২৯ বলে ৩২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললেও সিরিজের বাকি দুটিতে খেলার সুযোগ পাননি। ম্যাচটি খেলেছিলেন ৪ নম্বর পজিশনে। যদিও তিনি ওপেনার। চার নম্বরে ব্যাট করার চ্যালেঞ্জে কতটা জিতেছেন সে প্রসঙ্গে নাঈম বলেন, ‘হুট করে চার নম্বরে নামলে কীভাবে খেলতে হয় বা মিডল অর্ডাররা কোন চ্যালেঞ্জ বেশি মোকাবিলা করে, ওই জিনিসটা সাধারণত আমার জানা থাকে না। বাইরে থেকে অনেক সময় সহজ মনে হয়। এখন খেলে নতুন একটা অভিজ্ঞতা হলো। পুরোপুরি ভিন্ন একটা জায়গা। সব কিছু মিলিয়ে সব জায়গার ট্রেনিংই করি। তবে এখন যেটা ছিল, পুরোপুরি নিজের প্রস্তুতির জন্যই ছিল।’
প্রচণ্ড গরমে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে গতকাল অনুশীলন করেন নাঈম। দ্বীপরাষ্ট্রের বিপক্ষে চার নম্বরে ব্যাট করলেও ওপেনার হিসেবেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন নাঈম, ‘এখন পর্যন্ত যত দিন খেলেছি, ওপেনার হিসেবেই ব্যাটিং করেছি। এখনো ওই মানসিকতা নিয়েই অনুশীলন করলাম। কিন্তু মাথায় এটাও থাকে এমন না যে, সেট হওয়ার পর মাঝের ওভারে খেলিনি।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ নির্ধারণ ম্যাচটি জিতেছে মূলত স্পিনার শেখ মেহেদি হাসানের বিধ্বংসী বোলিংয়ে। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন। পেসার মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনরা ভালো করেছেন পুরো সিরিজে। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন দারুণ করছেন। নাঈম মনে করেন দলের বোলিং বিভাগও একটা মোমেন্টামে রয়েছে, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজে আমাদের ব্যাটাররা ভালো করেছেন। বোলাররা হয়তো ভালো করেননি। তারপরও আমি মনে করি, আমাদের বোলিং বিভাগ বেশ ভালো অবস্থায় আছে। তারা ভালো করছেন।’