১১৪ বছর বয়সে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বিশ্বখ্যাত ম্যারাথন দৌড়বিদ ফৌজা সিং। সোমবার (১৪ জুলাই) সকালে পাঞ্জাবের জলন্ধর জেলার নিজ গ্রাম বিয়াসে হাঁটার সময় একটি অজ্ঞাত যানবাহনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন তিনি। পরে বার্তা সংস্থা পিটিআই তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।
‘টারবানড টর্নেডো’ খ্যাত ফৌজা সিং ১৯১১ সালের এপ্রিল মাসে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুরও তিন বছর আগে। বয়সের শতক পেরিয়েও তিনি প্রমাণ করেছেন, বয়স কেবলই একটি সংখ্যা। ২০১১ সালে, ১০০ বছর বয়সে টরন্টো ম্যারাথনে অংশ নিয়ে ৮ ঘণ্টা ১১ মিনিটে দৌড় শেষ করে বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেন তিনি।
৮৯ বছর বয়সে নিজের প্রথম লন্ডন ম্যারাথনে অংশ নেন ফৌজা সিং। ২০০০ সালের এপ্রিল মাসে এই ম্যারাথনে সময় নেন ৬ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট। এটি সিনিয়র বয়স ক্যাটাগরির আগের রেকর্ডের তুলনায় ৫৮ মিনিট দ্রুত। এরপর তিনি লন্ডন ম্যারাথনে ছয়বার, টরন্টোতে দুইবার এবং নিউইয়র্ক ম্যারাথনে একবার অংশগ্রহণ করেন। সর্বশেষ ২০১২ সালে লন্ডন ম্যারাথনে পূর্ণ দৌড় শেষ করেন তিনি, সময় নিয়েছিলেন ৭ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট ২১ সেকেন্ড।

২০১৩ সালে হংকংয়ের ১০ কিমি ম্যারাথন ছিল তার শেষ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। এছাড়াও লাহোর ম্যারাথনের ১০ কিমি বিভাগেও অংশ নিয়েছিলেন, যেখানে তার প্রশংসা করেছিলেন তৎকালীন পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ।
ফৌজা সিংয়ের জীবন শুরুটা ছিল কঠিন। এক সময় শারীরিক দুর্বলতার কারণে তিনি হাঁটতেও পারতেন না। তবে পরিবারের সাহচর্য ও নিজের অধ্যবসায়েই তিনি হয়ে ওঠেন বিশ্বজয়ী দৌড়বিদ। স্ত্রী গিয়ান কৌরের মৃত্যুর পর ১৯৯৩ সালে তিনি এক ছেলের সঙ্গে ইংল্যান্ডে চলে যান। সেখান থেকেই তার ম্যারাথনে দৌড়ানোর যাত্রা শুরু।
ইংল্যান্ডে হরমন্দর সিংয়ের সঙ্গে পরিচয়ের পর থেকে ফৌজার দৌড়ের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। হরমন্দর বলেন, 'সে জানতও না ম্যারাথনের দৈর্ঘ্য কত। সে স্যুট পরে অনুশীলনে এসেছিল, আমি তখন তাকে ট্র্যাকসুট দিয়েছিলাম। মাত্র ছয় মাসেই সে প্রথম ম্যারাথনে অংশ নেয়।'
সারা জীবন তিনি দৌড়েছেন শুধু রেকর্ড গড়ার জন্য নয়, দাতব্য কাজের জন্যও। ‘ব্লিস’সহ বিভিন্ন সংস্থার জন্য অর্থ সংগ্রহে অংশ নেন ফৌজা সিং। তিনি ছিলেন অ্যাডিডাসের ‘ইম্পসিবল ইজ নাথিং’ প্রচারাভিযানের অন্যতম মুখপাত্র, যেখানে আরও ছিলেন মোহাম্মদ আলি ও ডেভিড বেকহ্যাম।
২০১৫ সালে ক্রীড়া ও দাতব্য ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ব্রিটিশ এম্পায়ার মেডেল (BEM) লাভ করেন। লন্ডন অলিম্পিক ২০১২-তে ছিলেন মশালবাহকদের একজন।
বিখ্যাত লেখক খুশবন্ত সিং ‘টারবানড টর্নেডো’ নামে তার জীবনী লেখেন। তিনি লিখেছিলেন, 'ফৌজা বাবা দুনিয়াকে সবসময় কিছু না কিছু দিয়েছেন। তিনি কখনও নিজের জন্য কিছু রাখেননি, দৌড় থেকে পাওয়া সব সম্মাননা ও অর্থ তিনি দান করে দিয়েছেন।'
বিডি প্রতিদিন/মুসা