ফুটবল ফেডারেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ফিফার গাইডলাইন মেনেই নির্বাচন হয়েছে। ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে সেপ্টেম্বরে। অক্টোবরে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন হওয়ার কথা। আইসিসির নিয়ম মেনেই নির্বাচন হবে। ফুটবল ও ক্রিকেট কমিটি গঠনে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ক্রীড়া উপদেষ্টার দায়িত্ব পান আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। দায়িত্ব পেয়েই তিনি ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো বিলুপ্ত করার কাজে হাতে দেন। গঠন করেন বাংলাদেশের খেলাধুলার ইতিহাসে প্রথম সার্চ কমিটি। এ কমিটির কাজ ছিল যাচাইবাছাই করে অ্যাডহক কমিটি গঠন। ক্রীড়া উপদেষ্টার এ উদ্যোগ ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিল। কেননা নির্বাচিত হলেও আওয়ামী লীগ আমলে অযোগ্য ও বিতর্কিত সংগঠকরা ফেডারেশনের দায়িত্ব পাওয়ায় খেলাধুলার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিলেন। ক্রীড়াঙ্গনে অযোগ্যদের দাপট ছিল তুঙ্গে।
যোগ্য ও অভিজ্ঞ সংগঠকরা ছিলেন অসহায়। খেলাধুলার গতি ও প্রাণসঞ্চারে ফেডারেশনগুলো বিলুপ্ত করে অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকেই বলা হয়েছিল, অস্থায়ী কমিটি ফেডারেশনে স্বচ্ছতা এনে বিদায় নেবে। এরপর যোগ্যরাই নির্বাচন করে তাদের মেয়াদ পর্যন্ত ফেডারেশন পরিচালনা করবেন। অ্যাডহক মানে অস্থায়ী ও নির্বাচিতদের স্থায়ী বলা হয়। এখন তো দেখা যাচ্ছে অস্থায়ী কমিটিই স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে। নির্বাচনের কোনো খবরই নেই। অধিকাংশ অ্যাডহক কমিটি নয় মাস হতে চলল। নিয়ম রয়েছে অস্থায়ী কমিটি বড়জোর ৯০ দিন ফেডারেশনের দায়িত্বে থাকবে। তিন মাসের পর ছয় মাস, এখন এক বছর ছুঁইছুঁই। এর পরও নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হচ্ছে না কেন?
নির্বাচন দিতে সমস্যা কোথায়? যোগ্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না, নাকি অ্যাডহকের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে কেউ নির্বাচন চাচ্ছেন না। অ্যাডহক কমিটি গঠনের পরও ফেডারেশনে কোনো গতি ফিরেছে কি? আগের সরকার আমলে তো ছিল শুধু বিতর্ক। এখন কি সব ঠিকঠাক চলছে? সত্যি বলতে কি. যে কর্মকাণ্ড তাতে অতীত ও বর্তমানের মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ক্রীড়াঙ্গন এতটা অস্থির যে অতীতও হার মানিয়েছে বলা যায়। হাতেগোনা কয়েকটি ফেডারেশন ছাড়া কোনো কর্মসূচি নেই। চেয়ারে বসাটাই যেন মুখ্য হয়ে পড়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুই চেয়ারে যাঁদের বসানো হয়েছে তাঁদের যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ক্রীড়া উপদেষ্টা ক্রীড়াঙ্গনের গতি ফিরিয়ে আনতে অ্যাডহক কমিটি গড়ার প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন। তাঁর উদ্যোগ প্রশংসিত হলেও বিভিন্ন ফেডারেশনের কর্মকাণ্ডে ক্রীড়ামোদীরা অস্থির। কাজ গুছিয়েই নির্বাচন দেওয়ার কথা। এতদিনে না হওয়াটা সত্যিই বিস্ময়। নয় মাস পার হতে চলেছে। নির্বাচনের কোনো লক্ষণ নেই। তাহলে বলে দিক অ্যাডহক কমিটি ভাঙা সম্ভব নয়।
ফেডারেশনগুলোর অভিভাবক সংস্থা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এ ব্যাপারে তারা কী বলে? দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিষয়টি স্পর্শকাতর বলে এড়িয়ে যান। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ছয় মাস বা নয় মাস নয়, হুট করে ফেডারেশনগুলোর নির্বাচন সম্ভব নয়। বিগত সরকার নিজেরদের ইচ্ছামতো আইন তৈরি করেছে। এখন নির্বাচন যেন নির্বাচনের মতোই হয়। স্বচ্ছভাবে ক্রীড়াঙ্গন পরিচালনার জন্য দরকার শক্ত গঠনতন্ত্র। সে লক্ষ্যেই কমিটি কাজ করছে। গত ১৫ বছর সর্বক্ষেত্রে অনিয়ম আর অনিয়ম। ক্রীড়াঙ্গনও এর বাইরে ছিল না। সময় হয়তো লাগছে, তবে যা হচ্ছে খেলাধুলার বৃহত্তর স্বার্থেই। ফ্যাসিস্ট কায়দায় আর কিছু হবে না।’