তিন বছর পর ফের তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়কত্বে ফিরে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। গত পরশু বিসিবি ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে মেহেদি হাসান মিরাজকে এক বছরের জন্য আনুষ্ঠানিক নিয়োগ দিয়েছে। সাদা পোশাক ও লাল বলে টেস্ট অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। রঙিন পোশাক ও সাদা বলে ওয়ানডে অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ এবং টি-২০ অধিনায়ক লিটন দাস। বাংলাদেশ সর্বশেষ তিন অধিনায়কের নেতৃত্বে খেলেছিল ২০২২ সালে। তিন অধিনায়কের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে বর্তমানে শ্রীলঙ্কা সফর করছে। দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজ খেলতে দুই ব্যাচে গত পরশু ও গতকাল ঢাকা ছেড়েছে নাজমুল বাহিনী। সফরে টাইগাররা প্রথম দুটি টেস্ট খেলবেন। এরপর সফরে তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-২০ খেলবেন। ১৭-২১ জুন প্রথম টেস্ট খেলবেন গলে। কলম্বোয় দ্বিতীয় টেস্ট খেলবেন ২৫-২৯ জুন। এ টেস্ট সিরিজ দিয়েই বাংলাদেশের আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৫-২০২৭ চক্র শুরু হচ্ছে। চলতি বছর শ্রীলঙ্কা সিরিজ দিয়েই বাংলাদেশের টেস্ট মিশন শুরু হবে।
প্রথম ব্যাচে কলম্বো পৌঁছান ইবাদত হোসেন, নাহিদ রানাসহ একাধিক ক্রিকেটার। গতকাল দ্বিতীয় ব্যাচে কলম্বোয় পা রাখেন অধিনায়ক নাজমুলসহ অন্যরা। শ্রীলঙ্কা সিরিজ দিয়ে ফিরেছেন ফাস্ট বোলার ইবাদত হোসেন। দুই বছর আগে ইনজুরিতে পড়ে মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন ইবাদত। তাঁকে নিয়ে স্কোয়াডে পেসার সংখ্যা ৪। ইবাদত ছাড়াও পেসার রয়েছেন নাহিদ রানা, হাসান মাহমুদ ও খালেদ আহমেদ। ইবাদতের ফিরে আসায় সন্তোষ প্রকাশ করেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল, ‘ইবাদত তার সেরা সময়ে ইনজুরিতে পড়েছিল। এখন সে কামব্যাক করেছে। সুযোগ এলে আবার খেলবে। এটা দলের জন্য বাড়তি একটি শক্তি হিসেবে কাজ করবে। আশা করি সুযোগ পেলে ভালো পারফর্ম করবে।’ টাইগার স্কোয়াডে চার পেসার ছাড়াও রয়েছেন চার স্পিনার। দুই বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও হাসান মুরাদ এবং অফ স্পিনার মেহেদি মিরাজ ও নাঈম হাসান। তাইজুল ও মিরাজের উইকেট সংখ্যা যথাক্রমে ২২৮ ও ২০৫। দুজনেই টেস্ট খেলেছেন ৫৩টি করে। হাসান মুরাদ জাতীয় দলের হয়ে মাত্র দুটি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন। নাঈমের উইকেট সংখ্যা ১২ টেস্টে ৩৯।
২০২১ সালে বাংলাদেশ সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সফর করেছিল। সেবার দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে একটি ড্র করেছিল বাংলাদেশ। পাল্লেকেলেতে টেস্ট ড্র করেছিল মুমিনুল হক ও নাজমুল শান্তের জোড়া সেঞ্চুরিতে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একমাত্র জয় ২০১৭ সালে। ৪ উইকেটে জয়টি পেয়েছিল বাংলাদেশ নিজেদের শততম টেস্টে। দুই দেশ এর আগে ১২ বার টেস্ট সিরিজ খেলেছে পরস্পরের বিপক্ষে। এবার ১৩তম সিরিজ খেলবে। এখন পর্যন্ত কোনো সিরিজ জিততে পারেনি। এবারও আন্ডারডগ হিসেবে খেলবে। ঘরে মাটিতে দ্বীপরাষ্ট্র বরাবরই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তার পরও প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্বপ্ন দেখছেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা হোক না... ভালোই হবে, যদি হয়।’
শ্রীলঙ্কার মাটিতে সাফল্য পেতে দুই-তিন স্পিন উইকেটে ব্যাটিং করেছেন নাজমুল, মুমিনুলরা। অনুশীলনে সবাই স্পিন উইকেটে ব্যাটিং করেছেন। টাইগার অধিনায়ক শুধু সুইপ খেলেননি, ব্যাটিং করেছেন ছোট ব্যাটে। ছোট ব্যাটে সুইপ এবং লং স্ট্রেচে ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যায় টাইগার অধিনায়ক বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা বরাবরই স্পিন উইকেটের সুবিধা নিয়ে খেলে। এবারও এর বাইরে যাবে না বলেই বিশ্বাস আমার। শ্রীলঙ্কার স্পিনারদের মোকাবিলা করতে সুইপ খেলছি। এটাকে আমি মনে করি ডিফেন্স করা।’ শ্রীলঙ্কা সিরিজ দিয়ে ২০২৫-২৭ সার্কেলের আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হচ্ছে। দ্বিতীয় সার্কেলে বাংলাদেশ ১২ টেস্ট খেলে চারটিতে জয় পেয়েছিল। জয়গুলো ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি এবং নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এবারও গত সার্কেলের চেয়ে ভালো পারফরম্যান্স করতে চাইছেন টাইগার অধিনায়ক, ‘ছোট ছোটভাবে যদি আমরা এগোতে পারি তাহলে খুব ভালো। কারণ, আপনি যদি দেখেন আমরা যখন শুরু করেছিলাম, প্রথম সার্কেলে মাত্র একটি ম্যাচ জিতেছিলাম। দ্বিতীয় সার্কেলে আমরা চারটি ম্যাচ জিতেছি। আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। টার্গেট থাকবে, এবার আরও দুই-তিনটি ম্যাচ বেশি জিততে পারি। আমরা যদি এভাবে ছোট ছোট চিন্তা করে এগোতে পারি তাহলে বাংলাদেশও একদিন ফাইনাল খেলবে। কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ সামনের দুই বছরের মধ্যে গত বছরের থেকে কীভাবে ভালো রেজাল্ট করছি আমরা।’