স্যার ইয়ান বোথামের পর মেহেদি হাসান মিরাজ! ১৪৮ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে যা করতে পারেননি ইমরান খান, কপিল দেব, জ্যাক ক্যালিস, স্যার রিচার্ড হ্যাডলি কিংবা সাকিব আল হাসান। সেই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন টাইগার স্পিন অলরাউন্ডার মিরাজ। ১৯৮৪ সালে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একই দিনে ৫ উইকেট ও সেঞ্চুরি করেছিলেন বোথাম। ৪১ বছর পর টাইগার সহ অধিনায়ক সেই বিরল কৃতিত্বটা দেখান চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বোথামের রেকর্ডগড়া পারফরম্যান্সের পরও ড্র হয়েছিল টেস্ট। কিন্তু জিম্বাবুয়ে পারেনি। মিরাজের রেকর্ড অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ তিন দিনে টেস্ট জেতে ইনিংস ও ১০৬ রানে। ইংলিশ অলরাউন্ডার বোথামের মতো মিরাজ একই দিনে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট নেন। ইতিহাসগড়া এমন পারফরম্যান্সের দিনে আলাদা একটি মাইলফলকও গড়েছেন মেহেদি মিরাজ। সাকিব আল হাসানের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ২ হাজার রান ও ২০০ উইকেট নেওয়ার ক্লাবে নাম লেখান স্পিন এ অলরাউন্ডার। ৫৩ টেস্টে মিরাজের রান ২০৬৮ ও ২০৫ উইকেট। ৭১ টেস্টে সাকিবের রান ৪৬০৯ ও উইকেট ২৪৬টি। ডাবলসের রেকর্ড গড়ায় মিরাজ পেছনে ফেলেন সাকিবকে। বাঁ হাতি অলরাউন্ডার কৃতিত্বটি দেখিয়েছিলেন ৫৪ টেস্টে। অবশ্য মিরাজের চেয়ে আগে ২ হাজার রান ও ২০০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে বোথাম (৪২), ইমরান (৫০), কপিল (৫০), রবীচন্দন অশ্বিন (৫১) ও রবীন্দ্র জাদেজার (৫৩)।
চট্টগ্রামে বাংলাদেশ টেস্ট জিতেছে ঘরের মাটিতে টানা ৬ হারের পর। ইনিংস ব্যবধানে জয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২ টেস্ট ম্যাচ সিরিজ ড্র করেছে নাজমুল বাহিনী। সিলেটে বাজে ব্যাটিং ব্যর্থতায় হেরেছিল ৩ উইকেটে। চট্টগ্রামে প্রতিশোধ নেয় টার্নিং উইকেট বানিয়ে। স্পিনাররা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করলেও সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরিকে খাটো করা যাচ্ছে না। মিরাজ ১০৪ ও সাদমান ১২০ রানের ইনিংস খেলেন। জোড়া সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের স্কোর ৪৪৪। প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ে ২২৭ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬.২ ওভারে ১১১ রানে গুটিয়ে যায়। দুই দিন হাতে রেখে জয় তুলে উচ্ছ্বসিত টাইগার অধিনায়ক নাজমুল। তিনি বলেন, ‘অসাধারণ পারফরম্যান্স। গোটা দলই দুর্দান্ত খেলেছে। ম্যাচ শুরুর আগে আমরা কাজ করেছিলাম এবং সেটা বাস্তবায়ন করতে পারায় আমি খুশি। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই। সিলেটে হারের পরও আমি মনে করিনি আমাদের ওপর কোনো আলাদা চাপ ছিল।’
বাংলাদেশের টেস্টটিকে আলাদা করে মিরাজের বললে কম হবে না! প্রথম ইনিংসে ছিল তাইজুলের স্পিন ভেলকি। কোনো উইকেট পাননি মিরাজ। তৃতীয় দিনের পুরোটাই নিজের করে নেন মিরাজ। প্রথমে সেঞ্চুরি এবং এরপর ৫ উইকেট। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে সাকিব ও সোহাগ গাজীর। দুর্দান্ত অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে মিরাজ শুধু ম্যাচসেরা নন, সিরিজসেরাও হয়েছেন। টেস্টে এবার নিয়ে তৃতীয়বার ম্যাচসেরা হয়েছেন তিনি। যা দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ। সিরিজসেরাও হয়েছেন তৃতীয়বার। সিরিজ ও ম্যাচসেরা হওয়ায় উচ্ছ্বসিত মিরাজ। তিনি বলেন, ‘জিততে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। প্রথম টেস্ট হেরেছিলাম। এই টেস্টটি নিয়ে দলের সবাই খুবই এক্সাইটেড ছিল। আমরা একটি দল হিসেবে খেলেছি। বোলারদের আলাদা করে কৃতিত্ব দিতেই হবে। তাইজুল আমাকে সাপোর্ট করেছে। আমার সেঞ্চুরিতে দারুণভাবে সহায়তা করেছে তানজিম সাকিব ও হাসান মাহমুদ। আমি অনেক দিন ধরে ক্রিকেট খেলছি। সিনিয়র ক্রিকেটাররা দলকে সাপোর্ট দেন নিরলসভাবে। যদি আমরা একটি দল হিসেবে খেলতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমরা একটি ভালো দল।’
নাজমুল বাহিনী গতকাল খেলতে নামে ৭ উইকেটে ২৯১ রান নিয়ে। টাইগাররা অলআউট হয় ৪৪৪ রানে। দ্বিতীয় দিন সেঞ্চুরি করেছিলেন সাদমান। গতকাল করেন মিরাজ। এটা তার ৫৩ টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। সর্বশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন ৫০ মাস আগে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে। ৫২ ইনিংস আগে সেঞ্চুরির ইনিংসটি খেলেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ২১৭ রানে পিছিয়ে থেকে জিম্বাবুয়ে মিরাজের ঘূর্ণিতে ৪৬.২ ওভারে ১১১ রানে গুটিয়ে যায়। হেরে যায় ইনিংস ও ১০৬ রানে। দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে বাংলাদেশের নবম জয়। দুই দলের ১১তম সিরিজে তৃতীয়বার ড্র হলো ১-১ ব্যবধানে।
মেহেদি হাসান মিরাজের কীর্তি
► টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি
► টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৩ বার ইনিংসে ৫ উইকেট
► একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট শিকারি বাংলাদেশের তৃতীয় ক্রিকেটার
► ২ হাজার রান ও ২০০ উইকেটের ‘ডাবল’ করা বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার
► একই সিরিজে ১ ম্যাচে ১০ উইকেট ও এক ইনিংসে সেঞ্চুরি করা টেস্ট ইতিহাসের সপ্তম ক্রিকেটার
► টেস্টে তৃতীয়বার ম্যাচসেরা ও সিরিজসেরা