বাংলাদেশের আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। চব্বিশের গণ বিপ্লব তার আরেকটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সরকারি চাকরিতে অযৌক্তিক কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক আন্দোলন শুরু থেকেই অত্যন্ত গোছালো ও পরিকল্পিত ছিল। তাদের প্রত্যেকটি দিনের কর্মসূচিতে ছিল ভিন্নতা। ছিল দূরদর্শী নেতৃত্বের ছাপ। সে কারণে এই আন্দোলনের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নজর ছিল, ছিল আন্দোলনকে ঘিরে ব্যাপক আগ্রহও। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গড়ে ওঠা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে শিক্ষকদের একটি বড় অংশই ছিল সরাসরি জড়িত। তারা কখনো রাজপথে থেকে সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের সাহস জুগিয়েছেন। কখনো বুদ্ধি-পরামর্শসহ নানাভাবে হয়েছেন আন্দোলনের সারথি। এ ক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইউট্যাবের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে সরব ও সুসংগঠিত।
মধ্য জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যখন ছাত্রলীগ-যুবলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা হামলে পড়ে তখন গর্জে ওঠেন ইউট্যাবের শিক্ষকরা। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সংগঠিত হয়ে তারা দাঁড়িয়ে যান রাজপথে, শিক্ষার্থীদের পাশে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে সামনে নিয়ে আসে বিএনপি। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইউট্যাবকে আরও সক্রিয় হতে নির্দেশ দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যদিও আন্দোলনের শুরু থেকেই ইউট্যাব সক্রিয় ছিল। তবে দলীয় প্রধানের ওই নির্দেশের পর সরকারি-বেসরকারি ক্যাম্পাসগুলোতে সব ধরনের সহযোগিতা নিয়ে ইউট্যাব আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ায়।
ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক একে অন্যের পরিপূরক এই কঠিন সত্যকে উপলব্ধি করেই ইউট্যাব পাশে ছিল সাধারণ ছাত্র-জনতার। অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার কিংবা শাহবাগ থেকে ভিসি চত্বর সবখানে পুলিশের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে দেখা যায় শিক্ষকদের। ৫ আগস্ট। সারা দেশে কারফিউ বলবৎ রয়েছে। সকাল থেকেই থমথমে রাজধানী। কোথাও জনমানুষের অস্তিত্ব তখনো নেই। এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জড়ো হন ইউট্যাবের শিক্ষকরা। ইউট্যাব প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম এবং মহাসচিব আমি ড. মোর্শেদ হাসান খানের নেতৃত্বে সেদিন শিক্ষকরা প্রথম কারফিউ ভাঙি। ইউট্যাবের সেদিনের সেই কারফিউ ভাঙার দৃশ্য মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো রাজধানীজুড়ে কারফিউ ভাঙার হিড়িক পড়ে যায়। গুটিয়ে যায় হাসিনার নিরাপত্তা বেষ্টনী। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অংশ হতে পেরে ইউট্যাবের প্রতিটি সদস্য গর্বিত। এই গর্ব এদেশের প্রতিটি বোধবুদ্ধি সম্পন্ন শিক্ষকের। কেননা শিক্ষকরাই তো একটি সমাজ, একটি দেশ গড়ার সত্যিকারের সৈনিক।
লেখক : অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আহ্বায়ক, সাদা দল