বিজ্ঞানীরা ইন্দোনেশিয়ার জাভা ও মাদুরা দ্বীপের মাঝখানে অবস্থিত মাদুরা প্রণালী থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার বছর পুরনো হোমো ইরেক্টাস (Homo erectus) প্রজাতির একটি খুলির সন্ধান পেয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এটি পৃথিবীর হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন ভূমি ‘সুনদাল্যান্ড’-এর প্রথম সরাসরি প্রমাণ হতে পারে।
এ আবিষ্কারের খবর প্রকাশিত হয়েছে ‘কোয়াটারনারি এনভায়রনমেন্টস অ্যান্ড হিউম্যান’ নামক এক বৈজ্ঞানিক জার্নালে। মূলত ২০১১ সালে মাদুরা প্রণালীতে একটি বড় নির্মাণ প্রকল্পের সময় বালু উত্তোলনের কাজ চলাকালে এই খুলির খোঁজ মেলে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে গবেষণা ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে এ মাসেই।
গবেষক দলের প্রধান হ্যারল্ড বার্ঘুইস জানান, এই সময়কালটি মানবজাতির বিকাশ ও অভিযোজনের দিক থেকে অনেক বৈচিত্র্যময়। খুলিটির অবস্থান, আকৃতি এবং চারপাশে পাওয়া অন্যান্য জীবাশ্ম এর তাৎপর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, খুলি ছাড়াও সেখানে ৩৬ প্রজাতির ৬ হাজারেরও বেশি প্রাণীর জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে কমোডো ড্রাগন, হরিণ, মহিষ এবং হাতির জীবাশ্ম। কিছু জীবাশ্মে মানুষের ছুরি বা ধারালো অস্ত্রের কাটার দাগও পাওয়া গেছে, যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে—সেই প্রাচীন মানবেরা শিকার করতো এবং এর জন্য হয়তো নির্দিষ্ট কৌশলও ব্যবহার করত।
বার্ঘুইস বলেন, মাদুরা প্রণালীর এই মানুষগুলো হয়তো শিকারের নিজস্ব কৌশল তৈরি করেছিল। আবার এটাও হতে পারে, অন্য কোনো অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে তাদের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান হয়েছিল।
এই খুলির সন্ধান প্রমাণ করছে, হোমো ইরেক্টাস প্রজাতির মানুষরা সুনদাল্যান্ড নামের বিস্তীর্ণ সবুজ প্রান্তরে বসবাস করত। আজ যেখানে সাগরের জল, একসময় সেখানে ছিল জনবহুল স্থলভূমি।
প্রসঙ্গত, প্রায় ১৪ হাজার থেকে ৭ হাজার বছর আগে বরফ গলে সাগরের পানির স্তর ১২০ মিটার বেড়ে যাওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ওই সমতল ভূমি পানির নিচে চলে যায়। সেই হারিয়ে যাওয়া ভূমিই আজ সুনদাল্যান্ড নামে পরিচিত।
বিজ্ঞানীদের মতে, হোমো ইরেক্টাস ছিল আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে কাছাকাছি গঠনের মানুষ। তারা ছিল দীর্ঘকায়, শক্তিশালী এবং চলাফেরায় অনেক বেশি সক্ষম।
এই আবিষ্কার প্রাচীন মানব ইতিহাসের একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেছে। পাশাপাশি গবেষকদের আশা, ভবিষ্যতে এই অঞ্চল থেকে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যেতে পারে, যা পৃথিবীর ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল