চুয়াডাঙ্গার আড়িয়া গ্রামের তরুণ শাহিন সরকার। এখন পর্যন্ত তিনি উদ্ধার করেছেন ৫০০-এর বেশি পাখি ও বন্যপ্রাণী। চিকিৎসা দিয়েছেন শতাধিক আহত প্রাণীকে। ব্যক্তিগতভাবে লাগিয়েছেন সাত হাজারের বেশি গাছ, আর সংগঠনের উদ্যোগে রোপণ করেছেন ২২ হাজার তালবীজ ও হাজার খানেক বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছ। তার উদ্যোগে গ্রাম পরিণত হয়েছে পাখি ও বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রমে।
শীত এলে শাহিনের গ্রামে ভিড় জমায় অতিথি পাখিরা। কিন্তু সঙ্গে আসে শিকারিরাও। শাহিন তাদের বোঝাতেন, ‘পাখি কেবল পাখি নয়, তারা আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।’ একসময় তার একাগ্রতায় গ্রামবাসীও বদলে যায়। ২০১৮ সালে পুরো গ্রাম ঘোষণা করে, ‘আমাদের গ্রাম পাখি ও বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম।’ গ্রামের প্রবেশমুখে টাঙানো হয় বড় সাইনবোর্ড। ২০১৮ সালে কয়েকজন বন্ধু নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন সংগঠন, ‘মানবতার জন্য’। অল্প সময়েই এই সংগঠন গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে দেয় এক সবুজ আন্দোলন। সংগঠনের কার্যক্রম হল, বর্ষার সময় গ্রামবাসীর হাতে গাছের চারা তুলে দেওয়া, তালবীজ রোপণ, স্কুল-কলেজে গিয়ে শিশুদের পরিবেশের পাঠ দেওয়া, এমনকি কৃষিজমি দূষণমুক্ত রাখতে কীটনাশকের জন্য বিশেষ ডাস্টবিন তৈরি করা। এসব উদ্যোগে শুধু মানুষই নয়, প্রকৃতিও পেয়েছে নতুন শ্বাস নেওয়ার সুযোগ। শুধু সংগঠনের উদ্যোগ নয়, ব্যক্তিগতভাবেও শাহিন লাগিয়েছেন প্রায় সাত হাজার গাছ। গ্রামে পরিবেশ রক্ষায় তিনি নিয়েছেন অভিনব উদ্যোগ, ‘কীটনাশকের ডাস্টবিন’। কৃষিজমিতে প্লাস্টিক ও কীটনাশকের বর্জ্য ছড়িয়ে পড়া রোধে তিনি কৃষকদের মধ্যে জনসচেতনতা গড়ে তুলছেন। গাছের সঙ্গে বড় বস্তা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানে স্পষ্ট লেখা থাকে, ‘কীটনাশক বর্জ্য এখানে ফেলুন।’ এই উদ্যোগের মাধ্যমে ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে প্রায় ৫০ বস্তা কীটনাশক বর্জ্য। বন বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শাহিনের এই কাজ স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। শাহিন বলেন, গ্রামের অনেক মানুষই এখনো অজ্ঞতার কারণে জমিতে প্লাস্টিক ও কীটনাশকের বোতল ফেলে দেন। ফলে মাটি দূষিত হয়, পানিও নষ্ট হয়, আর ফসল উৎপাদনও ব্যাহত হয়। তাই তিনি চান, এই উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ুক শুধু তার গ্রামে নয়, দেশের প্রতিটি গ্রামে। শাহিন শুধু পাখি রক্ষাতেই থেমে থাকেননি, আহত প্রাণীরও ভরসা হয়ে উঠেছেন। খবর পেলেই ছুটে যান, হোক সেটা মেছো বাঘ, খরগোশ কিংবা কোনো আহত বন্যপাখি।
শতাধিক অসুস্থ প্রাণীকে চিকিৎসা করে সুস্থ করেছেন, আর উদ্ধার করেছেন ৫০০টিরও বেশি প্রাণী। তিনি নিয়মিত কাজ শুরু করেন প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায়। সেই ধারাবাহিকতায় মানবতার জন্য সংগঠনের উদ্যোগে প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে রোপণ করা হয় ২২ হাজার তালবীজ এবং সঙ্গে লাগানো হয় হাজার খানেক বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছ।