দিনাজপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের রায়হান, আর কুড়িগ্রামের আরেক প্রত্যন্ত গ্রামের আয়েশা এখন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ছেন। রায়হান ওহাইও সেন্ট্রাল স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কৃষি ও জীববিজ্ঞান বিভাগে এবং আয়েশা ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন। এই দম্পতির সাফল্যের গল্প অনুপ্রেরণার...
প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা স্বপ্ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আলো ছড়াচ্ছেন রায়হান ও আয়েশা। তাদের সাফল্য অনুকরণীয়। দিনাজপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের রায়হান, আর কুড়িগ্রামের আরেক প্রত্যন্ত গ্রামের আয়েশা এখন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ছেন। ড. মো. রায়হানের জন্ম দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের কল্যাণী গ্রামে। বাবা অফেতুল্ল্যাহ সরকার ছিলেন স্কুলশিক্ষক। মা রাবেয়া বেগম গৃহিণী। ১৩ ভাইবোনের সংসারে ১১তম সন্তান রায়হান অল্প বয়সেই বাবাকে হারান। শৈশবের সেই দুঃসময় তাকে থামাতে পারেনি। বীরগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শুরু হওয়া শিক্ষাযাত্রা শেষ পর্যন্ত পৌঁছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহে। সেখান থেকে কৃষিতে স্নাতক ও এগ্রোনমি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে ৪০টির বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। ২০১৬ সালে পূর্ণবৃত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যের হারপার অ্যাডামস বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শুরু করেন। যার একটি বড় অংশ সম্পন্ন হয় যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়, আর্বানা-শ্যাম্পেইনে। ২০২০ সালে পিএইচডি সম্পন্নের পর ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি ও উইসকনসিন-ম্যাডিসনে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা করেন। বর্তমানে তিনি ওহাইও সেন্ট্রাল স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কৃষি ও জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। অন্যদিকে ড. আয়েশা সরকারের জন্ম কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় গ্রামে। বাবা আবদুল কাদের সরকার ছিলেন ব্যাংকার, মা আম্বিয়া সরকার গৃহিণী। ছোটবেলায় পড়াশোনার হাতেখড়ি ঢাকার উত্তরা হাইস্কুলে। এরপর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে। পরে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খাদ্য প্রকৌশলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৯ সালে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরবর্তীতে নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিনগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুড টেকনোলজিতে দ্বিতীয় মাস্টার্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি ও জৈবিক প্রকৌশলে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক। ২০০৭ সালে রায়হান ও আয়েশার বিয়ে হয়। তাদের ঘরে রয়েছে দুই সন্তান। রায়হান-আয়েশা দম্পতি শুধু জীবনসঙ্গী নন, গবেষণারও সঙ্গী। বীরগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক শ্রীমান্ত রায় বলেন, ‘রায়হান খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। আজ সে যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপক হয়েছে, এটা শুধু আমাদের বিদ্যালয়ের গর্ব নয়, পুরো এলাকার গর্ব।’ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের রায়হানের বাল্যবন্ধু বীরগঞ্জের সোহেল আহমেদ বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে খেলাধুলা করেছি, পড়াশোনা করেছি। আজ সে যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপক এটা ভাবতেই বুকটা ভরে যায়। ওর সাফল্য আমাদের বীরগঞ্জের প্রতিটি তরুণকে স্বপ্ন দেখাতে শেখাবে।’ এ ব্যাপারে নিজের অনুভূতি জানিয়ে ড. রায়হান বলেন, ‘গ্রামের মাটিতে শিক্ষা আর মায়ের অনুপ্রেরণাই আমাকে আজকের এই জায়গায় এনেছে।’ অধ্যাপক আয়েশা বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণদের বলব, স্বপ্ন দেখো আর হাল ছেড়ে দিও না, একদিন সফলতা আসবেই।’
গ্রামীণ মাটির ছেলেমেয়ে থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষা জীবনের সোপানে ওঠা এই দুজনের গল্প আজ দেশের জন্য অনুপ্রেরণার এক আলোকবর্তিকা। তাদের সাফল্যের গল্প প্রমাণ করে অধ্যবসায়, সঠিক দিকনির্দেশনা ও ত্যাগ থাকলে বাংলাদেশের তরুণরাও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলো ছড়াতে সক্ষম।