ফ্রান্সের বন্দর নগরী মার্সেইয়ে আয়োজিত ভূমধ্যসাগরীয় সাংবাদিকতা ফোরামে অভিবাসন বিষয়ক ন্যায্য ও মানবিক সংবাদ কভারেজের লক্ষ্যে একটি নতুন সাংবাদিকতা নির্দেশিকা প্রকাশিত হয়েছে। এগারো পয়েন্টের সনদটি ‘মার্সেই চার্টার’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ফ্রান্সের বন্দর নগরী মার্সেই-এ সনদটি প্রস্তাব করেছে মেডিটেরানিয়ান জার্নালিজম ফোরাম।
জানা যায়, সাংবাদিকতার মধ্যে অভিবাসন বিষয়ে পক্ষপাত ও ভুল তথ্যপ্রবাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন একগুচ্ছ সাংবাদিক ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের উদ্যোগে এ সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে পেশাদার সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের জন্য স্পষ্ট নৈতিক মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। মানদণ্ডগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে আরও দায়িত্বশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিবেদন নিশ্চিত করা।
ইউরোপ ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য গণমাধ্যমগুলো এতে স্বাক্ষর করেছে।
ফ্রান্স থেকে অংশ নিয়েছে ল্যুমানিতে, ফ্রান্স ২৪, আরএফআই, লা ক্রোয়া, মিডিয়াপার্ট, লিবারাসিওন, আল্টারনেটিভ ইকোনমিক ও তেলরামা, ইতালি থেকে ইল মানিফেস্টো ও জাতীয় বার্তা সংস্থা আনসা। স্পেন, মরক্কো, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া এবং লেবাননের বেশ কিছু প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এতে সই করেছে।
এছাড়া ইউরোপীয় সংবাদ প্ল্যাটফর্ম ইনফোমাইগ্রান্টস এ সনদের অন্যতম সমর্থক, যা পরিচালিত হয় ফ্রান্স মিডিয়াস মন্ডে (FMM), ডয়েচে ভেলে (DW) এবং আনসা-র যৌথ উদ্যোগে।
এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, অভিবাসন সংক্রান্ত সাংবাদিকতার নৈতিক মান রক্ষায় অঞ্চলজুড়ে ব্যাপক সমর্থন গড়ে উঠেছে।
সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ববোধ ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে ‘মার্সেই সনদ’ এক গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ সনদে যে ১১টি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলো হলো :
১. অভিবাসনের জটিলতা স্বীকার করুন– অভিবাসনের শত শত কারণ রয়েছে। প্রতিবেদনকে সরলীকরণ না করে এ জটিলতাকে প্রকাশ করতে হবে।
২. ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য সংশোধন করুন– সাংবাদিকদের উচিত দ্রুত ভুল সংশোধন ও তথ্য যাচাই করা। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধি বা কর্মকর্তাদের বক্তব্যের ক্ষেত্রে।
৩. বিভ্রান্তি ও স্টেরিওটাইপ উন্মোচন করুন– ক্ষতিকর গল্প বা প্রচারণার বিপরীতে সত্য তথ্য তুলে ধরতে হবে।
৪. নির্দিষ্ট জাতি/গোষ্ঠীকে কলঙ্কিতকরণ এড়িয়ে চলুন– ধর্ম, জাতি বা জাতিগত পরিচয় তখনই উল্লেখ করতে হবে যখন তা সংবাদে প্রাসঙ্গিক।
৫. অভিবাসীদের কণ্ঠস্বর অন্তর্ভুক্ত করুন– অভিবাসীদের নিজেদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতে সুযোগ দিতে হবে।
৬. সঠিক শব্দ ব্যবহার করুন– ‘শরণার্থী’, ‘আশ্রয়প্রার্থী’ বা ‘অভিবাসী’ শব্দের নির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে; ভুল ব্যবহার করা যাবে না।
৭. চিত্রগ্রহণে সম্মতি নিন– কারো ছবি তোলার আগে তার সুস্পষ্ট ও অবগত সম্মতি নেওয়া আবশ্যক।
৮. সম্মানজনক ও বাস্তবচিত্র উপস্থাপন করুন– স্টেরিওটাইপ এড়িয়ে চলতে হবে এবং বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরতে হবে।
৯. তথ্য ও পরিসংখ্যানের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করুন– সংখ্যাগত তথ্যের পেছনের বাস্তবতা ব্যাখ্যা করতে হবে।
১০. প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন ও সীমান্ত পেরিয়ে সহযোগিতা করুন– সাংবাদিকদের অভিবাসন আইন ও অধিকার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা করা উচিত।
১১. নিজেদের কাজ মূল্যায়ন করুন ও উন্নতি করুন– সংবাদকর্মীদের নিয়মিতভাবে তাদের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করা উচিত।
সনদ ঘোষণার সময় আয়োজকেরা বলেন, এটি কেবল একটি নীতিমালা নয়, বরং একটি নৈতিক অঙ্গীকার। অভিবাসন কভারেজে মানবিকতা ও দায়িত্ববোধ বজায় রাখতে এই সনদ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ