অন্যস্বরের আয়োজনে ড্যানফোর্থের হোপ ইউনাইটেড চার্চ মিলনায়তনে দ্বিতীয় বার অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘বৈশাথে পঙক্তিমালা’। গত বছর থেকে এ আয়োজন করছে অন্যস্বর।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় হলের গেট খোলার কথা থাকলেও তার আগেই দর্শকরা হলে ভিড় জমাতে শুরু করে। তবে মঞ্চের পর্দা উঠে ঠিক রাত আটটায়। আর তখনই দুজন শিশুশিল্পী মন্ত্র আর মুগ্ধ নিয়ে মঞ্চে উঠেন রনি মজুমদার। কৃতজ্ঞতা জানান এই আয়োজনের পেছনের কারিগর আর দর্শকদের। শিশু দুটি প্রথমে কোন কিছু রাজি না হলেও পরে দুজনই বাংলা ছড়া শোনান দর্শকদের। কানাডায় বেড়ে উঠা শিশুদের এমন পরিবেশনা মুগ্ধ করে দর্শকদের। তখন শুরু হয়নি মূল অনুষ্ঠান।
মঞ্চ ছেড়ে দেন রনি মজুমদার। এবার মঞ্চে মাইক্রোফোন হাতে ইলোরা সাঈদ আর আব্দুল বাসিত। বৈশাখের আগমনের নানা ইতিহাস আর নানা কথা বলেন। তবে দর্শকদের বিরক্তির কথা ভেবে দ্রুতই দুজন মঞ্চ থেকে ছেড়ে দেন। আর ঠিক তখনি আসিফ এর কণ্ঠে ‘এসো’, সমস্বরে তখন মঞ্চে উপস্থিত সকলেই বলে উঠে ‘এসো’। বৈশাখের আগমনের নতুন ধারার গান অচেনা বৈশাখ। আর এরপর আবৃত্তি নিয়ে আসেন উর্মী। সুললিত কণ্ঠে আবৃত্তি করে তিনি। পিনপতন নিরবতায় মিলনায়তন তখন শান্ত।
আবৃত্তি শেষ হতেই রিক্তা মজুমদার রবি ঠাকুরের গান নিয়ে হাজির। রবি ঠাকুরের গান শেষ হতেই বৃন্দ কবিতা। কবিতার রেশ কাটতে না কাটতেই সুকণ্ঠি গায়িকা শিরিন যখন গেয়ে উঠেন ‘বাউলা কে বানাইলোরে হাসন রাজারে বাউলা কে বানাইলো রে’। দর্শক তখন শিরিনের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে গাইছে হাসন রাজার গান। রবি ঠাকুর তো সব সময় ভর করেই থাকে অন্যস্বর এর আয়োজনে। তাই রবি ঠাকুরের কবিতা এক গায়ে নিয়ে হাজির হয় ইলোরা সাঈদ। সবাই যখন এক সাথে বলে রঞ্জনা। তখন মনে থাকেনা কোন যন্ত্রনা।
কিন্তু শুধু আবৃত্তিতে তো চলবে না। তাই মেহজাবিন গেয়ে উঠেন কল কল ছল ছল নদী করে টলমল। দর্শক আবারো সুরেলা কণ্ঠে পুরনো গান শুনে গেয়ে উঠৈ একসাথে। ঠিক এরপরই ফারিয়া আর লাকির মজার আবৃত্তিতে মিলনায়তনে তখন অন্যধারা চলছে। কিন্তু অন্যস্বর তো থামবার পাত্র নয়। তাইতো সদ্য দলে যুক্ত হওয়া মাসুদ পারভেজ ‘বকুল ফুল’ গাইতে গাইতে চলে যান দর্শকদের কাছে। পুরো হল তখন বকুল ফুলে মাতোয়ারা। কিন্তু হিরা আর হাসিও ছাড়বার পাত্র নয়। তিনি আবৃত্তি করেন তিনটি কবিতা। কিন্তু ঐ যে বললাম রবি ঠাকুর। তাইতো আবার সকলের কণ্ঠে ওগো শেফালি বনের মনের কামনা।
দর্শক যখন ভিন্ন আমেজে বসে আছে তখন ফারিহা, মুনিমা, জনি আর বেবি চারজন মিলে পুরো মঞ্চ দখল করে নিয়েছে। নানা ঢঙ্গে কবিতা, গান পুঁথি আর চলছে খানিকটা অভিনয়ও। দর্শক যখন এক দৃষ্টিতে চেয়ে তাদের দিকে তখন আসিফ গেয়ে উঠে আচ্ছা কেন মানুষগুলো কেন এমন হয়ে যায়।
কিন্তু অন্যস্বর আবার ফেরে কবিতায় দিলারা নাহার বাবু অনবদ্য কবিতা আবৃত্তিতে। রুপক ভিন্ন ধারার আবৃত্তি নিয়ে হাজির হয়ে দর্শক শ্রোতাদের মন জয় করেন। গায়ক গায়িকারাও কম যান না। এবার গেয়ে উঠে তোরা সব জয়ধ্বনি কর। শেষ হতেই নয়া বাইদা নিয়ে হাজির সকলেই। শেষ হতে না হতেই অনেক গানের ডালি দিয়ে শেষ প্রান্তে পৌঁছে অনুষ্ঠান। কিন্তু মানবী তৈরী হয়েই বসেছিলো বাঙালি ছন্দ কবিতা নিয়ে। তার পুত্রদ্বয় শুরু করেছে অনুষ্ঠান। আর মা করছে শেষ। বেশ বেশ।
সমাপনী বক্তব্য রাখলেন অন্যস্বরের কর্ণধার এবং বৈশাখী পঙক্তিমালার নির্দেশক আহমেদ হোসেন। আর বরাবরের মতো জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় এবারের বৈশাখের পঙক্তিমালা।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ