"রং যেন মোর মর্মে লাগে, আমার সকল কর্মে লাগে,/সন্ধ্যাদীপের আগায় লাগে, গভীর রাতের জাগায় লাগে"-কবিগুরুর এই গানের প্রতিটি চরণের প্রতিফলন ঘটেছিল ১৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম সমিতির পহেলা বৈশাখ এবং ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজনে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পেরিয়ে গভীর রাত অবধি রঙের মেলা জমেছিলো নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলীনে বাংলাদেশি অধ্যুষিত চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড এলাকায় "চট্টগ্রাম ভবন" এবং তার আশপাশের এলাকায়। ছিল যেন রঙের মেলা, প্রাণের মেলা। নানা বয়সী মানুষের ভিড়ে লোকারণ্য হয়ে যায় এলাকাটি, বিশেষ করে নারীদের উপস্থিতি ছিল অবাক করার মতন। নানা সাজে সকলে সেজেছিলেন এবং সাজিয়েছিলেন। ভবনের প্রবেশদ্বারে ছিল অতি আকর্ষণীয় সাজসজ্জা, আর ভেতরে বৈশাখী এবং ঈদ এর থিম দিয়ে সাজানো হয়, যা কিনা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। আর অতিথিরাও এসেছিলেন দূর দূরান্ত থেকে। বোস্টন, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া ,কানেক্টিকাট, ব্রঙ্কস, কুইন্স, স্ট্যাটেন আইল্যান্ড, লং আইল্যান্ড-কোনো এলাকাই বাদ পড়েনি। আর হোস্ট কাউন্টি ব্রুকলীন তো আছেই। তিল ধরণের ঠাঁই ছিল না। সকলেই মিশে গেছেন একসাথে, একাত্ম হয়েছেন মন খুলে। এমন দৃশ্য অনেকদিন দেখেননি চট্টগ্রামবাসী।
বিকেলে আগত অতিথিদের আপ্যায়ণ করা হয় নানা ধরণের হাতে তৈরী পিঠাপুলি দিয়ে, ছিল মচমচে মুড়ি আর ছোলা, গরম গরম জিলাপি ছিল সুপারহিট। আর চটপটির স্ট্যান্ডে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন মেয়েরা, ছেলেরাও বাদ যাননি।সবশেষে ছিল গরমাগরম চা। শিশুদের জন্য ছিল খেলনা এবং চকলেটের ছড়াছড়ি।
মাগরিবের নামাজের পরই শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলামের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবু তাহের। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, সকল চট্টগ্রামবাসীর মিলনকেন্দ্র চট্টগ্রাম সমিতি, সকলের অংশগ্রহণেই পূর্ণতা পাবে এই সংগঠন। ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে এক হবার আহব্বান জানান সভাপতি তাহের। এই পর্বে আরও বক্তব্য রাখেন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুর রহিম, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ, কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজম, সাবেক ট্রাস্টি বোর্ড’র কো-চেয়ারম্যান, প্রতিষ্ঠাতা ট্রেজারার শামসুল আলম, নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ, মোহাম্মদ সেলিম এবং মোর্শেদ রিজভী, অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্য নুরুল আনোয়ার, আবুল কাসেম চট্টলা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার আবু তালেব চৌধুরী চান্দু, আজীবন সদস্য সারওয়ার হোসেন, সমিতির সাবেক নির্বাহী সদস্য কামাল হোসেন মিঠু , সাবেক অডিট কমিটির সদস্য ইব্রাহিম দিপু, ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গীর, সংগঠক সৈয়দ অম বাবর, সৈয়দ হেলাল মাহমুদ, রাজনীতিক খোরশেদ খন্দকার, সাবেক কোষাধ্যক্ষ দিদার আহমেদ, জামাল চৌধুরী, সিপিএ শ্রাবনী, সাবেক সহ-সভাপতি সাহাবুদ্দিন চৌধুরী লিটন এবং ফোরকান আহমেদ, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খোকন কে চৌধুরী, সাবেক কোষাধ্যক্ষ মতিউর রহমান, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আশ্রাব আলী খান লিটন, কানেক্টিকাট থেকে আগত নাজিম চৌধুরী, আবুল কালাম, বাসন আলী , নিউজার্সি থেকে মোহাম্মদ আল মামুন, মোহাম্মদ সেলিম, উত্তম দাস, পেনসিলভেনিয়া থেকে কাজী মনসুর খৈয়াম, আমির হোসেন , ফেরদৌস ইসলাম, তৈয়ব উদ্দিন, শহিদুল ইসলাম, কলিম উদ্দিন, জিয়াউল হোক মিজান প্রমুখ।
বীর চট্টলার প্রবাসীরা এ আয়োজনে ব্যাপক সাড়া দেয়ায় সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ‘ঈদ পুনর্মিলনী এবং পহেলা বৈশাখ উদযাপন কমিটি’র আহব্বায়ক মোহাম্মদ এনাম চৌধুরী, সদস্য সচিব মোহাম্মদ টি আলম, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ শফিকুল আলম, সহকারী কোষাধ্যক্ষ নুরল আমিন, প্রধান সমন্বয়কারী তানিম মহসিন, যুগ্ম আহব্বায়ক ইমরুল কায়সার, সমন্বয়কারী মোহাম্মদ ইছা, অফিস সম্পাদক অজয় প্রসাধ, প্রচার সম্পাদক জাবের শফি, কলিম উল্লাহ, যুগ্ম সদস্য সচিব মোহাম্মদ মহিম উদ্দিন, পল্লব রায় প্রমুখ।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পর্বের পরেই শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের শিল্পী নাজু আখন্দ। একের পর এক জনপ্রিয় গান পরিবেশন করে সকলকে মাতিয়ে তোলেন। দর্শক এবং শ্রোতারা গানের তালে নেচে ভরিয়ে তোলেন অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ। সমস্ত হল জুড়ে এক আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। উপস্থিত সকলে দীর্ঘদিন পর চট্টগ্রাম ভবনে এরকম আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং আশা প্রকাশ করেন এই জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে। গানের অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে পরিবেশন করা হয় বৈশাখী এবং ঈদ মেন্যুতে সাজানো ঘরে তৈরী সুস্বাদু খাবার। খাবারের তালিকায় ছিল পান্তা ইলিশ, রোস্ট , খাসীর রেজালা, গরুর মাংস ভুনা, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা, টমেটো ভর্তা, ডাল, সাদা ভাত ইত্যাদি। ঈদের আবহকে ধরে রাখতে পরিবেশন করা হয় সেমাই।
রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত চলে অনুষ্ঠান। তারপরও যেন তৃপ্তি মিটেনি। চট্টগ্রাম ভবনের সামনে চলতে থাকে আড্ডা। এ সময় অনেকেই ভবনটিতে সংস্কারের মাধ্যমে সুপরিসর একটি কম্যুনিটি সেন্টারে পরিণত করার আগে সম্মুখস্ত ‘এভিনিউ প্লাজা’ পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় সমিতির বড় ধরনের আয়োজনগুলোর পরামর্শ দিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ