দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ছাড়িয়ে জনপরিসরেও এখন আলোচনার কেন্দ্রে ‘জুলাই ঘোষণা’। গত বছর যে দিনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়, সেই দিনেই অন্তর্বর্তী সরকার গণ-অভ্যুত্থানের সব পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করবে। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে, এর আইনগত ভিত্তি কী হবে তা নিয়ে আলোচনা প্রায় সর্বত্র।
শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়ে বলেন, ‘সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আগামী ৫ আগস্ট বিকেল ৫টায় গণ-অভ্যুত্থানের সব পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত অবিলম্বে ঘোষণা করা হবে।’
গত শুক্রবার তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, জুলাই ঘোষণাপত্র এখন বাস্তবতা। ৫ আগস্টের মধ্যেই ঘোষিত হবে ঘোষণাপত্র। ঘোষণাপত্র ইস্যুকে গণ-আকাঙ্ক্ষায় বাঁচিয়ে রেখে এটা বাস্তবায়নের পথ সুগম করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
এর আগে, গত ২৯ জুলাই তথ্য উপদেষ্টা লেখেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র গত ৩১ ডিসেম্বর ঘোষিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের জন্য সেবার সে প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বিভিন্ন দলের খসড়া প্রস্তুত হলেও ঘোষণাপত্রের বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে সংলাপ মীমাংসায় পৌঁছেনি। বিভিন্ন ধারা নিয়ে রাজনৈতিক আদর্শিক পজিশন নিয়ে নেগোসিয়েশন থমকে যায় পরের দুই মাস (মাঝে রমজান ছিল)। আশা করি, ৫ আগস্টের আগেই ঐকমত্য নিশ্চিত হবে এবং আমাদের প্রজন্ম ও জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মুখ দেখবে।’
এদিকে জুলাই ঘোষণা ও জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর শাহবাগ, শহীদ মিনার, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচির কারণে আজও ব্যাপক জনসমাগম হতে যাচ্ছে। জুলাই ঘোষণা সরকারি উদ্যোগে হওয়ার কারণে এনসিপি আজ রবিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ পাঠ করবে। দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শাহবাগ মোড়ে ‘জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে ছাত্র সমাবেশ করবে।
এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গত ১ আগস্ট থেকে প্রতিদিনই সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কালচারাল ফেস্ট ‘জুলাই জাগরণ’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই এলাকায় এখন রাজনৈতিক আবেগ-উত্তাপ চলমান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবও গত ৩১ জুলাই বলেছেন, “আগামী চার-পাঁচ দিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য একটি ‘ক্রুশিয়াল’ (খুব গুরুত্বপূর্ণ) সময়। এই কয়েক দিনে বোঝা যাবে আমরা কোথায় যাচ্ছি। কিন্তু একটি বিষয় নিশ্চিত, নির্বাচনে দেরি হবে না।”
তবে জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও নবগঠিত দল এনসিপির মতামত গ্রহণ করা হলেও অনেক দলের অভিযোগ, এ বিষয়ে তারা কিছুই জানে না বা তাদের জানানো হয়নি। এ ছাড়া এই ঘোষণার আইনগত ভিত্তি কী হবে, সেটি এখনো অস্পষ্ট। যে কয়টি দলের মতামত নেওয়া হয়েছ তারাও চূড়ান্ত ঘোষণাপত্র সম্পর্কে জানার অপেক্ষায়। অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলোর দলগুলোর কাছে যে খসড়া ঘোষণাপত্র পাঠানো হয়েছিল, তাতে বলা আছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের প্রস্তাবে এর উল্লেখ থাকবে এবং তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সংযুক্ত থাকবে। এ ঘোষণাপত্র ৫ আগস্ট, ২০২৪ সাল থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে।
ঘোষণাপত্র নিয়ে যেসব উদ্যোগ :
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হঠাৎ করে এই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আনে। তখন এর প্রভাব কী হতে পারে, তা বুঝতে চাইছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ঘোষণাপত্রের পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক-বিতর্কের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ নিয়ে সরকার সর্বদলীয় বৈঠক করে, কিন্তু তাতে ঐকমত্য হয়নি। ওই সময় বিএনপি এত দিন পর ঘোষণাপত্রের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরপর গত ১৬ জানুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে।
সম্প্রতি এনসিপি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আবার সরব হয়ে ওঠে। গত ৪ জুলাই ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ে এক পথসভায় এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই-আগস্টের মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। তিনি এও বলেন, এই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক ভিত্তি থাকবে। অন্যথায় তাঁদের পক্ষ থেকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ দেওয়া হবে বলে সরকারকে সতর্ক করেন নাহিদ। তবে এবারের উদ্যোগকে বিএনপি বেশ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও মনে করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত একটি ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া সম্প্রতি তাদের দলের একজন শীর্ষ নেতার কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হয়। সে বৈঠকে ঘোষণাপত্রটি কার্যকরের সময়কালসহ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপি নেতারা দ্বিমত ব্যক্ত করেন।
খসড়া ঘোষণাপত্রের ২৬ দফা :
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তুত করা খসড়া ঘোষণাপত্রে যে ২৬ দফা রয়েছে সেগুলো হলো- দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা ও শোষণ ও নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে জাতীয় মুক্তির জন্য রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা; স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বিবৃত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার; ১৯৭২ সালের সংবিধানের পদ্ধতি ও কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হওয়া এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করা; গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাকশালের নামে সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম এবং মত প্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করা, যার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহি জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটন হয়; আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ বছর ছাত্র-জনতার অবিরাম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান সংঘটন এবং ১৯৯১ সালে পুনরায় সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন; দেশি-বিদেশি চক্রান্তে সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় ১/১১-এর ষড়যন্ত্রমূলক বন্দোবস্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদের পথ সুগম করা; দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী শাসনব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে এবং একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অতি উগ্র বাসনা চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে সংবিধানের অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পরিবর্তন করা এবং যার ফলে একদলীয় একচ্ছত্র ক্ষমতা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হওয়া; বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, গুম-খুন, আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন, বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা; ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে তারই নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া ও ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার বিষয়টি।
খসড়া ঘোষণাপত্রে আরও উল্লেখ রয়েছে- তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থপাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলা এবং এর পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ুকে বিপন্ন করা হয়। রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণের প্রায় ১৬ বছর ধরে নিরন্তর গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করে জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার বিষয়টিও বলা আছে। বিদেশি রাষ্ট্রের অন্যায় প্রভুত্ব, শোষণ ও খবরদারির বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে বহিঃশক্তির তাঁবেদার আওয়ামী লীগ সরকারের নিষ্ঠুর শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দমন করা; তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন) এ দেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করা; আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতাকর্মী, শিক্ষার্থী ও তরুণদের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা, সরকারি চাকরিতে একচেটিয়া দলীয় নিয়োগ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে ছাত্র, চাকরিপ্রত্যাশী এবং নাগরিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের জন্ম; বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ওপর চরম নিপীড়নের ফলে দীর্ঘদিন ধরে জনরোষের সৃষ্টি এবং সব বৈধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই চালিয়ে যাওয়া; সরকারি চাকরিতে বৈষম্য বিলোপ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের ব্যাপক দমন-পীড়ন, বর্বর অত্যাচার ও মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড চালানো, যার ফলে সারা দেশে দল-মত-নির্বিশেষে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণবিক্ষোভ গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেওয়া; অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দল, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সব স্তরের মানুষের যোগদান এবং রাজপথে নারী-শিশুসহ প্রায় দুই সহস্র মানুষকে নির্বিচারে ফ্যাসিবাদী বাহিনীর হত্যা করা, অগণিত মানুষের পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণ করা এবং আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সমর্থন করার বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে।
এ ছাড়া ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জনগণের অসহযোগ আন্দোলন শুরু, ৫ আগস্ট ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ, ছাত্র-জনতা তথা সর্বস্তরের সব শ্রেণি-পেশার জনসাধারণের গণভবনমুখী উত্তাল যাত্রা, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া; রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবেলায় গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ, যা রাজনৈতিক ও আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসংগত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; জনগণের দাবি অনুযায়ী অবৈধ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামতের আলোকে সাংবিধানিকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা; বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিপ্রায় প্রকাশ; নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধান ও সব রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনে জনগণের অভিপ্রায় ব্যক্ত; বিগত ১৬ বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ২০২৪-এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধগুলোর দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত; যুক্তিসংগত সময়ে আয়োজিতব্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত; ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান ও যুক্তিসংগত সময়ে আয়োজিতব্য নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের প্রস্তাবে এর উল্লেখ থাকা এবং তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সংযুক্ত থাকা এবং এ ঘোষণাপত্র ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখ থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়ার কথাও উল্লেখ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন :
বিষয়টি সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদ দুটিরই আইনগত ভিত্তি থাকতে হবে। জামায়াত ও এনসিপি বলেছে, আইনগত ভিত্তি না দেওয়া হলে তারা জুলাই সনদে সই করবে না। যে সংস্কার প্রস্তাবে যে দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে সেই দল ক্ষমতায় গেলে সে প্রস্তাব কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে? জুলাই ঘোষণাপত্রেরও আইনগত ভিত্তি থাকা প্রয়োজন। এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দায়মুক্তি ও স্বীকৃতির দলিল হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমি মনে করি, এতে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হবে। জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ আলাদা বিষয়। জুলাই ঘোষণায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও এই সরকারের কার্যক্রমকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এই ঘোষণা হবে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য এটা খুবই প্রয়োজন।’
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ