যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় প্রথমবারের মতো দেখা গেছে, বাদুড়ের ডানা ও পেছনের অঙ্গ থেকে আলোক বিচ্ছুরণকারী আভা বের হয়। এই আবিষ্কারটি সম্প্রতি ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকরা বলেন, এটি উত্তর আমেরিকান বাদুড়দের মধ্যে এমন প্রথম রেকর্ড। এর ফলে এমন প্রাণীর তালিকা আরও দীর্ঘ হলো, যাদের দেহ আলো পেলে জ্বলে ওঠে। তবে এখনো জানা যায়নি কেন কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহ এমনভাবে জ্বলে ওঠে, আবার অন্যদের নয়।
গবেষণার প্রধান লেখক ব্রায়ানা রবারসন বলেন, তিনি ২০১৯ সালের এক গবেষণাপত্র থেকে অনুপ্রাণিত হন। সেই গবেষণায় প্রথম দেখা গিয়েছিল উড়ন্ত কাঠবিড়ালিও অতিবেগুনি আলোয় জ্বলে ওঠে। এরপর থেকেই বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রাণীর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রবারসন তার গবেষণায় ছয় প্রজাতির বাদুড় নিয়ে কাজ করেন—বিগ ব্রাউন ব্যাট, ইস্টার্ন রেড ব্যাট, সেমিনোল ব্যাট, সাউথইস্টার্ন মায়োটিস, গ্রে ব্যাট ও ব্রাজিলিয়ান ফ্রি-টেইল্ড ব্যাট। তিনি জর্জিয়া মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টরির সংরক্ষিত ৬০টি বাদুড়ের নমুনায় ইউভি (UV) আলো ফেলেন এবং প্রত্যেকটির ডানা ও পেছনের অঙ্গ থেকে সবুজ আলোক বিচ্ছুরণ লক্ষ্য করেন।
গবেষকেরা প্রথমে ধারণা করেন, গাছের পাতায় আশ্রয় নেওয়ার সময় এই আভা হয়তো ছদ্মবেশ হিসেবে কাজ করে। কিন্তু ক্লোরোফিলের (পাতার সবুজ রঞ্জক পদার্থ) তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, রঙের মিল নেই। পরবর্তীতে তারা পরীক্ষা করেন, এই আভা বাদুড়দের পরস্পরকে চেনার কাজে লাগে কি না। কিন্তু সব নমুনার আলো একই তরঙ্গদৈর্ঘ্যের হওয়ায় সেই ধারণাও বাতিল হয়।
গবেষকেরা বলছেন, এখনো জানা যায়নি এই আলোক বিচ্ছুরণের কোনো পরিবেশগত বা সামাজিক ভূমিকা আছে কি না। তবে তারা মনে করেন, ভবিষ্যতে গবেষণার মাধ্যমে এই বৈশিষ্ট্যের উদ্দেশ্য জানা গেলে প্রাণীর পরিবেশ-অভ্যস্ততা ও বিবর্তন সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।
গবেষণার সহ-লেখক স্টিভেন ক্যাসলবেরি বলেন, আমরা জানতে চাই, বাদুড়েরা কীভাবে তাদের পরিবেশে কাজ করে এবং এই আভা তাদের কোনোভাবে সাহায্য করে কি না। বিষয়টি বুঝতে পারলে সংরক্ষণ কার্যক্রমেও তা উপকারে আসবে।
অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন মিউজিয়ামের গবেষক কেনি ট্রাভুলিয়ন পূর্বে এ ধরনের গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। তিনি জানান এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীতে এমন আলোক বিচ্ছুরণ দেখা গেছে। পৃথিবীতে যেহেতু ৬,০০০-এরও বেশি স্তন্যপায়ী প্রজাতি আছে, তাই আরও বহু প্রাণীর মধ্যেও এই বৈশিষ্ট্য থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, সম্ভবত এই বৈশিষ্ট্য বহু আগে থেকেই প্রাণিজগতের উত্তরাধিকারসূত্রে টিকে আছে। কিন্তু কেন তারা জ্বলে ওঠে, সেটি এখনো এক রহস্য।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল