রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তান ছেয়ে গেছে অবৈধ বিভিন্ন দোকানপাট আর বিপণিবিতানে। হকাররা প্রায় ১ হাজার অবৈধ দোকান পসরা সাজিয়ে বসেছেন গুলিস্তান ও আশপাশের সড়কগুলোতে। এর ফলে পল্টন, গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকাতেও যানজট ও বিশৃঙ্খলা চরম আকার ধারণ করেছে। এর অদূরে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের সামনেও যানজট লেগেই থাকছে। সরেজমিন দেখা গেছে এমন অরাজকতার চিত্র। সবকিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগায় হলেও তারা যেন দেখেও না দেখার ভান করছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সিটি করপোরেশন কর্মকর্তারা বলছেন মাঝেমধ্যেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার কথা। যদিও বাস্তবে এ চিত্র খুব কমই দেখা যায়। এর ফলে যানজটের ভোগান্তিসহ নানা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন নগরবাসী।
সরেজমিন দেখা গেছে, গুলিস্তানে ঢাকা ট্রেড সেন্টার মার্কেট, গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স, জীবন বীমা করপোরেশন ভবনের সামনে, জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের সামনে, গুলিস্তান মাজারের বিপরীতে, রমনা ভবনের সামনেসহ প্রায় সবখানেই সড়ক দখল করে হকাররা দোকান বসিয়েছেন। কাপড়চোপড়, জুতা, ব্যাগ, প্রসাধনী, ফলমূল থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন তারা। শুধু ফুটপাত নয় তারা দখল করেছেন সড়ক-মহাসড়কও। আর এতে প্রশস্ত রাস্তা হয়েছে সংকীর্ণ, লেগেই আছে যানজটের ভোগান্তি। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আনাগোনা এই গুলিস্তানে। এ ছাড়া পুরান ঢাকা, পল্টন, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন রুটের যান চলাচল করে থাকে গুলিস্তান দিয়ে। কিন্তু এই ব্যস্ত এলাকার সড়ক-মহাসড়কে সকাল থেকে রাত অবধি অবৈধভাবে দোকানপাট বসানোর ফলে যানজটের নাভিশ্বাস শুরু হয়েছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ, নষ্ট হচ্ছে অজস্র কর্মঘণ্টা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হাছিবা খান প্রতিবেদককে বলেন, গুলিস্তান এলাকায় হকার ও ভাসমান দোকান উচ্ছেদে মাঝেমধ্যেই ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু এর এক/দুই দিন পরই তারা ফের ফিরে আসে। কীভাবে তাদের স্থায়ীভাবে সরিয়ে দেওয়া যায় তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভাবছেন। এ কর্মকর্তা আরও বলেন, এই অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা শুধু সিটি করপোরেশনের একার দায়িত্ব নয়। যেসব মার্কেটের সামনে অস্থায়ী দোকান বসাচ্ছেন সেই মার্কেটের লোকজন ছাড়াও অন্যদেরও দায়িত্ব রয়েছে। ডিএমপির মতিঝিল জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার হুসাইন মুহাম্মদ ফারাবী প্রতিবেদককে বলেন, অবৈধ উচ্ছেদের বিষয়টির অথরিটি আমি একা নই। আমাদের সামর্থ্যরে মধ্যে নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে থাকি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য ইউনিটও দায়িত্ব পালন করে থাকে। পুরান ঢাকার বাসিন্দা আসিফুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় গতকাল। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আগে শুধু ফুটপাতে অবৈধ দোকানপাট লক্ষ্য করা যেত। কিন্তু গত প্রায় বছরখানেক সময় ধরে প্রধান সড়কগুলোতেও এই অবৈধ দোকানপাট গজিয়ে উঠেছে। গুলিস্তান মাজার থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত সুপ্রশস্ত সড়ক থাকলেও এই পুরো সড়ক দখল করে হকাররা বিভিন্ন দোকানপাট বসিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও তারা কিছুই বলছেন না এই অবৈধ দোকানদারদের। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় অসাধু রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা বাহিনীর একটি অংশ অবৈধ এসব দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে থাকে। এ কারণে নির্ভয়ে মাসের পর মাস অবৈধভাবে দোকান পরিচালনা করছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক হকার বলেন, অবৈধভাবে দোকান করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন পক্ষকে চাঁদা দিতে হয়। কিন্তু কাকে কত টাকা দিতে হয় তা বলতে রাজি হননি তিনি।