নিউইয়র্ক সিটির নতুন মেয়র জোহরান মামদানিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা তার নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা দাবি করছেন, মামদানি নাগরিকত্ব অর্জনের সময় তথ্য গোপন করেছেন এবং তাকে নাকি ‘কমিউনিস্ট’ ও ‘সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের সমর্থক’ বলা যেতে পারে। তবে এ অভিযোগের পক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মামদানি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম এবং প্রথম দক্ষিণ এশীয় নাগরিক হিসেবে নিউইয়র্কের নেতৃত্ব গ্রহণের পথে রয়েছেন। কিন্তু তাঁর জয়ের পরই ওয়াশিংটনের রিপাবলিকান মহলে বিতর্ক দানা বাঁধে।
রিপাবলিকান প্রতিনিধি অ্যান্ডি ওগলস অভিযোগ তুলেছেন, নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদনে মামদানি নাকি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করেছেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, যদি তিনি মিথ্যা বলে থাকেন, তবে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার নেই। প্রমাণিত হলে তাকে দেশ থেকে ফেরত পাঠানো উচিত।”
আরেক রিপাবলিকান প্রতিনিধি র্যান্ডি ফাইন মিডিয়ায় দাবি করেন, মামদানি যথেষ্ট সময় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস না করেই নাগরিকত্ব পেয়েছেন।
কিন্তু তথ্য-যাচাইকারী সংস্থা পলিটিফ্যাক্ট এ দাবির কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পায়নি। জানা যায়, মামদানি ৭ বছর বয়সে (১৯৯৮ সালে) যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন; যা আইনি শর্ত পূরণ করে।
আইন অনুযায়ী, নাগরিকত্ব বাতিল বা ডিন্যাচারালাইজেশন করা যায় শুধু আদালতের আদেশে এবং তা সে ক্ষেত্রেই, যখন কেউ বেআইনিভাবে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন বা ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করেন।
অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ জেরেমি ম্যাককিনি জানান, এটি একটি বিরল এবং কঠিন প্রক্রিয়া। মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের মতো কোনো ভিত্তি আমরা দেখছি না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রিপাবলিকানদের অভিযোগ মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মুসলিম-বিরোধী তর্কের অংশ। কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস এই প্রচেষ্টাকে ‘বর্ণবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
মামদানি বলেন, ইসলামভীতি এই দেশের রাজনীতির এক রোগ। মুসলমানরা এই সমাজের অংশ, এ সত্য মানতে না পারলেই এমন অভিযোগ ওঠে।
নিউইয়র্ক ইয়ং রিপাবলিকান ক্লাব এবার যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী ব্যবহার করার কথা বলছে—যার মাধ্যমে ‘বিদ্রোহে জড়িত বা দেশের শত্রুকে সমর্থনকারী’ ব্যক্তিকে সরকারি পদে বসতে বাধা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি আদালতে টিকবে না।
আইন বিশেষজ্ঞ ক্যাসান্ড্রা বার্ক রবার্টসন বলেন, এই মামলা সফল হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।
মামদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ এখনো প্রমাণহীন। আইনি বিশেষজ্ঞদের সার্বিক মতে এ ধরনের প্রচেষ্টা সফল হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।
জোহরান মামদানি আগামী বছরে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল