রাজস্ব আদায়ে ধস নেমেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। গত বছরের তুলনায় এবার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্ধেকও রাজস্ব আদায় করতে পারেনি সংস্থা দুটি। রাজস্ব আয় এমন কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে সরকারের পট পরিবর্তন এবং পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই অবস্থা জনবলেও। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ দুই সিটি করপোরেশনে ২ হাজারেরও বেশি পদ খালি রয়েছে। এ ছাড়া এডিসবাহিত ডেঙ্গু মশার প্রাদুর্ভাব তো রয়েছেই। প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী এবং একই সঙ্গে মারাও যাচ্ছে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা তো রয়েছেই। নির্বাচিত মেয়র না আসা পর্যন্ত এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জনবলসংকট : চলতি বছরের ২৬ মে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামানকে বদলি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত পদটি খালি রয়েছে। তবে সংস্থাটির সচিব মোহাম্মদ মামুন-উল-হাসান অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। সেবাদাতা সংস্থাটির শুধু এই পদটিই নয়, ২ হাজার ৬৮০ পদের মধ্যে খালি ৯১৫টি। প্রকৌশল, বর্জ্য, ভান্ডার ও ক্রয়, রাজস্ব, নগর পরিকল্পনা, সংস্থাপনসহ প্রতিটি বিভাগে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। একই অবস্থা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও। দক্ষিণ সিটির রাজস্ব খাতে অনুমোদিত ৩ হাজার ১৬৬ পদের মধ্যে ১ হাজার ৩০৭টি শূন্য। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ না হওয়ায় একজন কর্মকর্তাকে একসঙ্গে দুই-তিনটি দপ্তরের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের অবস্থাও একই। একজনের কাঁধে একাধিক জোন। সংস্থা দুটির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যেই স্পষ্ট জনবলসংকট কতটা প্রকট। ফলে কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে চলছে ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে নাগরিক সেবায়।
রাজস্ব আয় তলানিতে : ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দক্ষিণ সিটির রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে মাত্র ৭১১ কোটি। ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৩০ কোটি টাকা। অন্যদিকে উত্তর সিটির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ১ হাজার ২৫০ কোটি, ঘাটতি ৩৮০ কোটি। কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষ করে মেয়র পদে বসতে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের টানা আন্দোলনের কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হয়, যার প্রভাব পড়ে রাজস্ব আদায়ে।
মশার উৎপাত : রাজধানীতে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না মশার উৎপাত। বিশেষ করে এডিসবাহিত মশা। এ মশায় প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী। দিনের বেলায় ডেঙ্গু রোগবাহী এডিস, আর সন্ধ্যার পর কিউলেক্সের আক্রমণে অতিষ্ঠ নগরবাসী। বাড়ছে ডেঙ্গু সংক্রমণের সংখ্যা।
যত্রতত্র ময়লা : হাটবাজার, অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক- সবখানেই ময়লার স্তূপ। বর্জ্যব্যবস্থাপনা সেকেলে ও নাজুক হওয়ায় সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। রান্নাঘর, হাটবাজার, কসাইখানা ও হাসপাতালের বর্জ্য নিরাপদে অপসারণ না হওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মক আকার ধারণ করছে।
বিশেষজ্ঞ মত : বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান মনে করেন, সিটি করপোরেশনগুলোর কিছু সংকট আগে থেকেই ছিল, তবে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সেগুলো তীব্র আকার নিয়েছে। জনবল ও রাজস্বসংকট প্রশাসকরা চাইলে মোকাবিলা করতে পারেন, তবে কার্যকর সমাধানের জন্য নির্বাচিত মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ জরুরি।