অনলাইন আর অফলাইন- সব লাইনেই সুন্দরীদের টার্গেট করতেন তৌহিদ আফ্রিদি। স্ট্রিম কার নামে একটি অ্যাপসের মাধ্যমে তিনি নারী শিকার করতেন। আর বিভিন্ন ক্লাব আর অনুষ্ঠানে নিজে হাজির থেকে প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের নিজের কবজায় নিতেন। আর এসব নারীকে তিনি পাঠাতেন সাবেক মন্ত্রী আর পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে। বিনিময়ে অনলাইনে রাজত্ব করতেন তৌহিদ আফ্রিদি। একসময় তিনি হয়ে ওঠেন অনলাইন মাফিয়া। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদের ছত্রছায়ায় কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি হয়ে ওঠেন অনলাইন মাফিয়া। তিনি এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠেন যে তার কথামতো চলতে হতো অনলাইন ক্রিয়েটরদের। কথা না শুনলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হতো গোপন ডেরায়। মারধর থেকে শুরু করে হুমকিধমকি দেওয়া হতো। এমনকি প্রশাসনের লোকজনের সামনেই গুম করা হবে বলেও হুমকি দিতেন তৌহিদ। এ ছাড়া অবৈধ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি অন্তত অর্ধশত তরুণীকে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজে বাধ্য করান। আর এই কাজে সঙ্গে থাকতেন আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের ছেলে জ্যোতি। জুলাইয়ের দুটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির অন্ধকারজগতের নানা তথ্য ফাঁস হতে শুরু করেছে। অসংখ্য ভুক্তভোগী নারী-পুরুষ তৌহিদ আফ্রিদির অপরাধের নানা সেক্টর নিয়ে মুখ খুলছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব তথ্য নিয়ে কাজ করছে।
জানা গেছে, কামাল, হারুন ও আফ্রিদি সিন্ডিকেট এক হয়ে কাজ করে আসছে কয়েক বছর ধরে। আফ্রিদির অন্যতম টার্গেট ছিলেন সুন্দরী নারী-তরুণী সাপ্লাই করা, তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ও মদ্যপান। মতবিরোধ হলে দিতেন হুমকি এবং নির্যাতন চালাতেন। এ ছাড়া মাদক কারবারে আফ্রিদির হাত ছিল পাকা, কোনো রকম ঝক্কিঝামেলা ছাড়াই হারুন-কামালের শেল্টারে চালাতেন এসব। স্ট্রিম কার নামে একটি অ্যাপসের মাধ্যমে তৌহিদ আফ্রিদি অনলাইন জুয়া এবং মাদকের কারবার চালাতেন। এই অ্যাপসের মাধ্যমেই তিনি শিকার করতেন সুন্দরী নারীদের। এ ছাড়া তার বাবা নাসির উদ্দিন সাথীর অবৈধ সব দখলদারির আশ্রয়প্রশ্রয় দিতেন হারুন ও কামাল। সেজন্য ডিবি অফিসে আফ্রিদির কথামতো যাকেতাকে তলব করতেন হারুন। সেখানে নিয়ে চালানো হতো মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন- যা আফ্রিদি গ্রেপ্তারের পরপরই একাধিক কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও ভুক্তভোগী তরুণী ও মানুষের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, তৌহিদের অন্ধকারজগতের নেপথ্যের শক্তি ছিলেন অনেক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও সাবেক অনেক আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা। এভাবে তার নারী কেলেঙ্কারিসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। সূত্র জানায়, সাবেক সরকারের আমলে নারী সাপ্লায়ার, চাকরিবাণিজ্য, মাদক কারবার, অর্থসম্পদ দখলসহ সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেই তৌহিদ আফ্রিদির সম্পৃক্ততা ছিল। আফ্রিদির খপ্পরে যেসব তরুণী, নারী কিংবা কনটেন্ট ক্রিয়েটর পড়েছেন তাদের জীবন নাস্তানাবুদ করে ফেলেছেন তিনি। বিয়ের আশ্বাস ও মডেল বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে অসংখ্য তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন। ওই সময় তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেননি। কারণ তার হাতে ছিল সোশ্যাল মিডিয়ার একটা বড় নিয়ন্ত্রণ। ফলে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের কাছে আতঙ্কের আরেক নাম ছিলেন আফ্রিদি। তার গ্রেপ্তারের পর কনটেন্ট ক্রিয়েটর সায়েম, একাধিক ভুক্তভোগী নারী ও তরুণী, কনটেন্ট ক্রিয়েটর আফ্রিদির বন্ধু তানভীর রাহী, প্রত্যয় হিরন, স্বপন আহমেদসহ অনেকের কথায় এসব আধিপত্য ও নির্যাতনে কথা উঠে আসে। এদিকে সিআইডি গতকাল এক লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছে, তৌহিদ আফ্রিদির বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই পরিচালিত হচ্ছে। আইন সংগত কারণে এ চলমান তদন্তসংক্রান্ত কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত কাউকে প্রদান করা হয়নি। ভবিষ্যতে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে গণমাধ্যমকে যথাযথভাবে অবহিত করা হবে।