দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি স্থিতাবস্থায় রয়েছে। তবে রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদের পানি আবারও বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বন্যার পানি কমলেও প্লাবিত লোকজনের দুর্ভোগ কমেনি। এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র কয়েক জেলায় নতুন বন্যাজনিত বিপদাশঙ্কার কথা জানিয়েছে। সতর্কীকরণ কেন্দ্র উল্লেখ করেছে, নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি জেলার নিম্নাঞ্চল সাময়িক প্লাবিত হতে পারে। বর্তমানে দেশের সব প্রধান নদনদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, মুহুরী, সেলোনিয়া, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, নোয়াখালী খাল ও রহমতখালি খালের পানি সমতলে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী তিন দিনে এসব নদনদীর পানি সতর্কসীমায় পৌঁছাতে পারে। এতে ফেনী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল সাময়িক প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের রাঙামাটি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কাপ্তাই হ্রদের পানি এখন বিপৎসীমার কাছাকাছি। তাই খুলে দেওয়া হয়েছে কাপ্তাই কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৬টি স্পিলওয়ে। গত রাত ৮টায় কাপ্তাই কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৬টি স্পিলওয়ে ৬ ইঞ্চি করে খোলা হয়। কর্ণফুলী নদীতে পানি ছাড়া হচ্ছে প্রায় ৯ হাজার কিউসেক। কাপ্তাই কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মো. মাহমুদ হাসান প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানান।
বিউবো সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে রুলকার্ভ অনুযায়ী পানি রয়েছে ১০৮.৩২০ ফুট এমএসএল, যা একেবারে বিপৎসীমার কাছাকাছি। বর্তমানে হ্রদের পানি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাই আপাতত ৯ হাজার কিউসেক কর্ণফুলী নদীতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে হ্রদের পানি আরও বৃদ্ধি পেলে পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, এ জেলায় পদ্মা ও আশপাশ নদনদীগুলোর পানি কমলেও এখনো প্লাবিত রয়েছে নিম্নাঞ্চলের ১২ হাজার পরিবারের বড়িঘর। বন্ধ রয়েছে প্রায় ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয়, চুলকানি, ঘা এবং হেপাটাইটিস। পদ্মার পানি গতকাল ৩৪ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে নিম্নাঞ্চলে পানি ধীরগতিতে নামায় সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও আলাতুলী এবং শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা, উজিরপুর, দুর্লভপুর ও মনাকষা ইউনিয়নের প্রায় ১২ হাজার পরিবার পানিবন্দি থাকায় চরম দুর্ভোগে রয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. ইয়াছিন আলী বলেন, ‘বন্যায় নিম্নাঞ্চলের ৮ হাজার ৩০০ কৃষকের ২ হাজার ১২ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।’ জামালপুর প্রতিনিধি জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে পৌর শহরের রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি জলমগ্ন রয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় দৈনন্দিন কাজকর্ম চালাতে হচ্ছে শত শত পরিবারকে। বসতবাড়ির চারপাশে রয়েছে পানি, তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, নলকূপ, রান্নাঘরসহ সবকিছু। দীর্ঘ সময় পানিবন্দি জীবনযাপনের কারণে বাসিন্দাদের হাত-পায়ে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। নলকূপ পানিতে তলিয়ে থাকায় বিশুদ্ধ পানি নিয়েও পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।