রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়করা পাঁচটি প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কেউ শিবির-সমর্থিত, কেউ স্বতন্ত্র, আবার কেউ সর্বজনীন প্যানেলে যুক্ত হয়েছেন। গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উঠে আসা এসব সমন্বয়কের একত্র হওয়ার প্রত্যাশা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। অনেকে বলছেন, রাজনৈতিক পরিচয় ও পদ বণ্টন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় তাঁরা আলাদা হয়ে গেছেন।
সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের নিয়ে সংগঠন গড়া হলেও রাজশাহীতে তা হয়নি। ফলে সমন্বয়করা সাংগঠনিক সীমার বাইরে গিয়ে কাজ করছেন। সবাই ভিপি বা জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্য হলেও শীর্ষ পদ সীমিত হওয়ায় সবাইকে একত্রে আনা সম্ভব হয়নি।’ ১৭ জন সাবেক সমন্বয়কের মধ্যে ১০ জন মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছেন। এর মধ্যে একজন স্বতন্ত্র, বাকিরা বিভিন্ন প্যানেল থেকে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ পর্যন্ত ৯টি প্যানেলের আত্মপ্রকাশ হয়েছে, যার পাঁচটিতে আছেন সাবেক সমন্বয়করা।
শিবির ঘোষিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি ফাহিম রেজা। তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শিবির দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছে এবং সম্প্রতি ছাত্রবান্ধব রাজনীতির চেষ্টা করেছে। সে জায়গা থেকে আমি তাদের প্যানেলে যুক্ত হয়েছি।’
অন্যদিকে সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী মারুফ ভিপি প্রার্থী হয়ে ঘোষণা করেছেন ‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেল। একইভাবে ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদে’ ভিপি প্রার্থী হয়েছেন ফুয়াদ রাতুল। ১০ সেপ্টেম্বর ঘোষিত ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলে ভিপি পদে লড়বেন মেহেদী সজীব, আর ১১ সেপ্টেম্বর ঘোষিত ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’-এ ইতিহাসের প্রথম নারী ভিপি প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াচ্ছেন তাসিন খান।
তাসিন বলেন, ‘আলাদা প্যানেল মানে মতাদর্শে অমিল নয়। রাকসু নিয়ে চিন্তাভাবনায় ভিন্নতার কারণে আলাদাভাবে লড়ছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে আমরা একসঙ্গে প্রতিবাদে থাকব।’
সাইবার বুলিংয়ের আতঙ্কে সরে দাঁড়ালেন দুই নারী সমন্বয়ক : যেখানে অনেক সাবেক সমন্বয়ক সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে যুক্ত হয়েছেন, সেখানে সাইবার বুলিংয়ের কারণে দুই নারী সমন্বয়ক প্রার্থী হতে পারেননি। ফৌজিয়া নৌরিন অভিযোগ করে বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের পর আমি এত সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছি যে মানসিক ভারসাম্য রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল। নির্বাচনে দাঁড়ালে আবার একই অভিজ্ঞতার শঙ্কা রয়েছে। প্রশাসন নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ায় আমি অংশ নিচ্ছি না।’
আরেক সাবেক সমন্বয়ক অহনা মৃত্তিকা বলেন, ‘আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থীরা সামনে থাকলেও পরে কেউ তাদের অবদান মনে রাখেনি। উল্টো নানা কটূক্তি ও সাইবার বুলিং শুরু হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিবেশ নেই।’
ফলস্বরূপ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কের বেশির ভাগ নির্বাচনে যুক্ত হলেও সাইবার বুলিং ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে নারী নেতৃত্ব অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে।