বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনৈতিক পরিস্থিতি। নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে একের পর এক ঘটছে হত্যাকাণ্ড। হচ্ছে প্রকাশ্যে অস্ত্র মহড়া। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে পিটিয়ে জখম করাসহ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে নারায়ণগঞ্জের কোনো না কোনো এলাকায়। একসঙ্গে যারা দীর্ঘদিন রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে তারাই যেন একে অপরের শত্রু হয়ে গেছেন! জানা যায়, বিগত চার মাসেই নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় পাঁচটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যেসব হত্যাকাণ্ডে বিএনপির নেতা-কর্মীরাই অভিযুক্ত। এতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
আধিপত্যের লড়াইয়ে এক রাতেই দুই লাশ : ২১ জুন দিবাগত রাতেই নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই পক্ষের দুজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বন্দরের হাফেজীবাগ এলাকার মৃত সাদেক আলীর ছেলে কুদ্দুস মিয়া (৬০) ও শাহি মসজিদ এলাকার মৃত আবদুল জলিল মুন্সির ছেলে মেহেদী হাসান (৪২) দুজনই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দুই পক্ষই মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশার অনুসারী। মেহেদী বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। কুদ্দুস পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের মেহেদীর প্রতিপক্ষ গ্রুপের সমর্থক। স্থানীয়ভাবে স্বেচ্ছাসেবক দলের একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন রনি ও জাফর এবং অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মেহেদী হাসান, বাবু সিকদার, জুয়াড়ি বাবু ও শ্যামল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারা এক পক্ষই ছিলেন। কিন্তু সরকারের পতনের পরই তারা দলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যান। সবশেষ দুই পক্ষই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা বলেন, মেহেদী ও রনি ছিল আমার আপন ভাইয়ের মতো। তারা আমার সঙ্গে বিগত ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী হিসেবে বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তাদের মধ্যে কীভাবে কী হয়ে গেল আমার বুঝে আসছে না।
রূপগঞ্জে তিন লাশ
২৯ মার্চ রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের মধ্যে সংঘর্ষে খুন হন যুবদলকর্মী মো. হাসিব (৩২)। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হন। ১১ এপ্রিল রূপগঞ্জের দাউদপুরে ব্যবসাসংক্রান্ত বিরোধে খুন হন যুবদল কর্মী শান্ত সরকার (২৪)। ১০ জুন রাতে রূপগঞ্জের ভুলতা মাঝিপাড়ায় স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক এক ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে খুন হন ভুলতা ইউনিয়ন যুবদলের কর্মী মামুন ভূঁইয়া। প্রত্যেকটি ঘটনাতেই বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরই অভিযুক্ত করছেন তাদের স্বজনরা।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বিএনপি কোনো সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয় না। বন্দরের ঘটনায় যারা নেতৃত্বে আছে তারা কেউ বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তারা নিজেদেও ব্যক্তিগত স্বার্থে এ ধরনের গ্রুপিং করছে এটার দায় দায়িত্ব তাদের। এটা দলের কোনো দায়িত্ব নয়। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, যেখানেই এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে সেখানেই দল তাৎক্ষণিকভাবে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সাংগঠনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিএনপি সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, কোনো ঘটনা ঘটা মাত্রই আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কে কোন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। অপরাধী হলেই তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়া হচ্ছে। কোনো অপরাধীকে কোনোরকম ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।