গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে ত্রাণের জন্য অপেক্ষমাণ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অনেকে। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। গতকাল সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের বরাতে জানিয়েছে আলজাজিরা। ত্রাণসামগ্রী আনতে গিয়ে প্রায়ই ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলার শিকার হচ্ছে ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দারা। এতে এখন পর্যন্ত কয়েক শ নিরীহ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। গতকাল খান ইউনিসে ত্রাণের জন্য অপেক্ষমান গাজাবাসীর ওপর গুলিবর্ষণ এ ধরনের সর্বশেষ ঘটনা। প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে বলা হয়, গতকাল সকালে খান ইউনিসের প্রধান পূর্বাঞ্চলীয় সড়কের ধারে ত্রাণের জন্য জড়ো হয়েছিলেন একদল গাজাবাসী। তখন তাদের লক্ষ্য করে আচমকা গুলিবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা। এতে অন্তত ৫১ জন প্রাণ হারান। আহত হন অনেকে, যাদের স্থানীয় নাসের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে হাসপাতালের চিকিৎসকদের বরাতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে বলা হয়, ‘নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট ও অপারেশন থিয়েটার মৃত ও আহতের ভিড়ে উপচে পড়ছে।’ ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) তিন সপ্তাহ আগে গাজায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। এ কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার ইসরায়েলি বাহিনী ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত গাজাবাসীদের লক্ষ্য করে নির্বিচার গুলিবর্ষণ করেছে। গতকালের ঘটনা ছিল এরই সর্বশেষ উদাহরণ।
এদিকে, ওই সংগঠনের ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে পরিচালিত ফাউন্ডেশনটি ত্রাণ বিতরণ করছে এমন এলাকায় যা পুরোপুরি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। বহু পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার সংস্থা এ ধরনের ত্রাণ কেন্দ্রকে ‘মানব কসাইখানা’ বলে আখ্যায়িত করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, ‘ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিচালনার পদ্ধতি এবং ব্যবহৃত অস্ত্র-গোলাবারুদের প্রয়োগ ফিলিস্তিনিদের ওপর অমানবিক, ভয়াবহ ও মেনে নেওয়া যায় না- এমন ভোগান্তি চাপিয়ে দিচ্ছে।’
উল্লেখ্য, গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে কয়েক শ ইসরায়েলিকে হত্যা করে। এ ছাড়া দেড় শতাধিকের মতো ইসরায়েলিকে জিম্মি করে নিয়ে আসে। এরই জেরে গত ২০ মাসে ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজা ভূখণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫৫ হাজার ৩৬২ জন ফিলিস্তিনি। এদের মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার শিশু ও নারী।