ফের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কভিড-১৯। বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘এক্সইসি’। শুধু থাইল্যান্ডেই গত সপ্তাহে আক্রান্ত হয় ৫৪ হাজার। দ্রুতগতিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে ইউরোপ ও আমেরিকায়। এশিয়ার দেশ হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারতেও আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বাংলাদেশেও বাড়তে শুরু করেছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শরীরে উপসর্গ দেখা দিলেও টেস্ট করছেন না অনেকেই। তবে সংক্রমণ ক্ষমতা আগের ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ১০ গুণ বেশি হলেও প্রাণঘাতী হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সুরক্ষিত থাকতে স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রিন্স অব সংক্লা ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অব ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সের ভিজিটিং প্রফেসর ড. বিজন কুমার শীল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কভিড-১৯ ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত বাড়তে শুরু করেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে জার্মানিতে এ ভ্যারিয়েন্টের রোগী শনাক্ত হয়। সেখান থেকে ইউরোপ, আমেরিকা, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, থাইল্যান্ডে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এ বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত থাইল্যান্ডে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছে ৫৪ হাজার। অন্য ভ্যারিয়েন্টে ভাইরাস ফুসফুসে বিস্তার ঘটাত, কিন্তু এ ভ্যারিয়েন্ট শ্বাসনালিতে বংশবিস্তার করতে পারায় সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এর কারণ হিসেবে এ অণুজীব বিজ্ঞানী বলেন, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট মিউটেশন হয়ে জেএন১ ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হয়েছিল। জেএন১ ভ্যারিয়েন্ট থেকে কেপি৩.৩ এবং কেএস.১.১ ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হয়েছিল। এই দুই ভ্যারিয়েন্ট এক জায়গায় তৈরি হয়েছে এক্সইসি ভ্যারিয়েন্ট। এ দুই ভ্যারিয়েন্ট থেকে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য এ ভ্যারিয়েন্টে এসেছে। এটার স্পাইক প্রোটিনে টি২২এন এবং কিউ৪৯৩ই এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ মিউটেশন হয়েছে। আমার মনে হয় এর ফলে এ ভ্যারিয়েন্ট জেএন১ ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ১০ গুণ বেশি সংক্রামক। এতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও অতটা প্রাণঘাতী হবে না। তবে বয়স্ক ব্যক্তি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, আথ্রাইটিসের মতো রোগ আছে এমন রোগী ঝুঁকিতে থাকবেন। তাই তাদের ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।
এর উপসর্গগুলো সম্পর্কে জানা যায়, আগের ভ্যারিয়েন্টের মতোই জ্বর, গলাব্যথা, কাশি, দুর্বলতা, মাথাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাকে গন্ধ এবং খাবারের স্বাদ না পাওয়া, বমি, পেটে ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় ডায়রিয়াও হতে পারে। যারা এর আগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং টিকা দিয়েছেন তারা অনেকটা সুরক্ষা পাবেন। শুধু টিকা নিয়েছেন তাদের তুলনায় আক্রান্ত হয়েছেন আবার টিকাও নিয়েছেন তারা কিছুটা বেশি সুরক্ষা পাবেন। স্বাস্থ্যবিধি মানার মধ্যে রয়েছে মাস্ক পরা এবং হাত ধোয়া।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে গত সোমবার পর্যন্ত ১২৯ জন কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল ১৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন ছয়জন। তবে অনেকের মাঝে উপসর্গ থাকলেও টেস্ট করছেন না। হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে বাড়তে শুরু করেছে জ্বর, ঠান্ডা, কাশিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পেতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সবাই জানে। হাসপাতাল, বাজার, স্কুল, কলেজে মাস্ক পরতে হবে, হাত ধুতে হবে। জ্বর এলে বিশ্রামে থাকতে হবে। বয়স্ক ব্যক্তিদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে হবে।’