ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচারে আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষে ফের শাহবাগ থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে একটি প্রতিনিধি দল পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সেরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শাহবাগ থানার ওসি এবং একজন এডিসি আমাদের জানিয়েছেন, আগে তিনজন আসামির কথা বলা হয়েছিল, এখন আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আসামিদের ছয় দিনে রিমান্ডের আবেদন করা হলে তা মঞ্জুর করা হয়েছে।’ ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম বলেন, এরই মধ্যে আসামিদের সংখ্যা বেড়েছে, তাছাড়া পুলিশের হেফাজতে থাকা আসামিদের যে ছয় দিন রিমান্ড রয়েছে, আশা করা যায় সেখান থেকে অনেক তথ্যই বের হয়ে আসবে। আমরা আশা করব, অতি দ্রুত সাম্য হত্যার বিচার নিশ্চিত করা হবে। একই সঙ্গে ওই গ্যাংয়ের বাকি সদস্যদের দ্রুতই গ্রেপ্তারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে সাম্যের বড় ভাই শহিদুল আলম সৈকত বলেন, আমরা অতি দ্রুত সাম্য হত্যাকণ্ডের বিচার দেখতে চাই।
বেলা পৌনে ২টার দিকে প্রায় দেড় ঘণ্টা অবস্থান শেষে ফের ক্যাম্পাসে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানানো হয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে তা জানাবেন তারা। এর আগে বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শিক্ষার্থীরা একে একে জড়ো হন। পরে সেখানে সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরও অংশ নেন।
ছাত্রদলের কালো পতাকা মিছিল : সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচার, ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতার দায়ে উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে কালো পতাকা মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে ঢাবি শাখা ছাত্রদল। গতকাল দুপুর ১টায় কালো পতাকা মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে আরম্ভ হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করার পর অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
ছাত্রদলের শাহবাগ অবরোধ : সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে বিকালে শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এদিন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান গ্রহণ করেন তারা। পরে বিকাল ৪টার দিকে শাহবাগ মোড়ে তারা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। বিকাল পৌনে ৬টার দিকে তারা শাহবাগ ত্যাগ করেন। এ সময় ছাত্রদলের কেন্দ্র, মহানগরসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম : সাম্য হত্যাকাণ্ডে বিচারের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদেরর সংগঠন সাদা দল। এ সময়ের মধ্যে সাম্য হত্যাকাণ্ডের খুনিকে খুঁজে বের করতে না পারলে কঠোর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেন তারা। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ আলটিমেটাম দিয়ে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, ‘সাম্য মারা যায়নি, হত্যা করা হয়েছে। সাম্য হত্যার আজ পাঁচ দিন পূর্ণ হলো। এ পাঁচ দিনে আমরা একটি আইওয়াশ এরেস্ট দেখেছি যা আমরা মানতে বাধ্য নই। প্রকৃত হত্যাকারী কে তা বের করার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছি। আমরা ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিচ্ছি। এর মধ্যে যদি সাম্য হত্যার প্রকৃত খুনিকে খুঁজে বের করা না হয় তাহলে আমরা জোরালো আন্দোলনে যাব।’এদিকে সাম্য হত্যাকাণ্ডে জড়িড সব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনার অনুরোধ জানাতে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাবি উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল।