‘আমরা বিচার পাচ্ছি না। ৫ আগস্টের পর আমাদের এভাবে দাঁড়ানোর কথা ছিল না। আমাদের জন্য কোনো দেশ স্বাধীন হয়নি। আমরা তো আমাদের বাবাদের ফেরত পাইনি। আমাদের এখনো কেন এভাবে দাঁড়াতে হয়? আয়নাঘরে কোনো লোক নেই, তাহলে ওই লোকগুলো কই? আমাদের বাবারা, আমাদের চাচ্চুরা কোথায়? তাদের এভাবে মেরে ফেলতে পারে না।’
গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গেটের সামনে (হাই কোর্টের মাজার গেট) ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা বলছিল গুমের শিকার বংশাল থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হোসেনের মেয়ে আদিবা ইসলাম হৃদি। ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর রাজধানীর শাহবাগ থেকে যখন পারভেজ হোসেন নিখোঁজ হন, তখন তার মেয়ে হৃদির বয়স ছিল মাত্র দুই বছর। ছোট্ট সেই শিশুর বয়স এখন প্রায় ১৪ বছর। কিন্তু এখনো বাবাকে খুঁজে পায়নি সে। ‘বলপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন বাহিনীর অভিযুক্ত কর্মকর্তা এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের’ দাবিতে এ অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে মায়ের ডাক। অবস্থান কর্মসূচিতে গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার ও গুম থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। অবস্থান কর্মসূচি শেষে হাই কোর্টের মাজার গেটে চিফ প্রসিকিউটরের প্রতিনিধিদের হাতে তিন দফা দাবির স্মারকলিপি তুলে দেয় মায়ের ডাক। এ কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না নিজেও গুমের শিকার হয়েছেন বলে জানান। বাংলাদেশে যেসব গুম, খুন হয়েছে, সেগুলো ভারতের নির্দেশনায় হয়েছে অভিযোগ করে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, ভিন্নমতকে দমন ও হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার সব চেষ্টা ভারত করেছে। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে প্রতিবাদী, বিপ্লবীদের গুম, খুন করা হয়েছে। কাউকে কাউকে দুই-তিন বছর গুম করে রেখে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিচার নিয়ে টালবাহানা আমরা মানব না। আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার শাহাদাৎ টুটুল বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ফিরিয়ে আনতে হলে গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত সব ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে হাজারো ভাইয়ের গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হওয়ার পেছনে অনেক ম্যাকানিজম ছিল, অনেক বড় একটি হাত ছিল, অনেক মানুষের সম্পৃক্ততা ছিল। বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তারা অভিযুক্ত ছিলেন। আজকে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের আট মাস পরও অভিযুক্ত কয়জনকে গ্রেপ্তার হতে দেখেছেন? যুদ্ধ যদি চব্বিশে একবার হয়, যুদ্ধ প্রয়োজনে আরেকবার হবে। মায়ের ডাকের আরেক সমন্বয়ক মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ইব্রাহিম কবির মিঠু, হিউম্যান রাইটস সোসাইটির সদস্য সাইফুল ইসলাম, জাতীয় মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাসচিব মাহবুব প্রমুখ।