গ্রীষ্ম মৌসুমের দাবদাহ এখনো শুরু হয়নি। কিন্তু এখনই চট্টগ্রাম নগরে সুপেয় পানির সংকট শুরু হয়ে গেছে। নদীর পানিতে বাড়ছে লবণাক্ততা, ফলে কমছে পানি উৎপাদন। নগরে দৈনিক ৫৮ কোটি লিটার পানির চাহিদা থাকলেও এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ৪৬ কোটি লিটার। দৈনিক ঘাটতি থাকছে ১২ কোটি লিটার। প্রতি বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে পানিসংকটের এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলেও প্রতিকারের দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায় না। ফলে দুর্ভোগ সঙ্গী হয়েই থাকে নগরবাসীর।
জানা যায়, স্বাভাবিক অবস্থায় কাপ্তাই লেকে পানির স্তর থাকে সর্বোচ্চ ১০৯ মিনস সি লেভেল (এমএসএল)। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে আছে ৮৭ দশমিক ৭৭ এমএসএল। পানি কম থাকায় কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে চালু আছে মাত্র একটি। অন্যদিকে, স্বাভাবিক সময়ে হালদা নদীর পানির লবণাক্ততার সহনীয় মাত্রা প্রতি লিটারে ১০০ থেকে ২৫০ মিলিগ্রাম। কিন্তু এখন জোয়ারের সময় এর পরিমাণ ২ হাজার ১০০ মিলিগ্রাম। ফলে জোয়ারের সময় পানি উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়। প্রতি বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানিতে লবণের উপস্থিতি দেখা দেয়। এপ্রিল আসতেই তা চরম আকার ধারণ করে। হালদা ও কর্ণফুলী নদীনির্ভর চারটি পানি পরিশোধনাগার থেকে বর্তমানে ৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন কমানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে নগরের অনেক এলাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে পতেঙ্গা, কাট্টলী, সিটি গেট, হালিশহর, পাহাড়তলী ও জাকির হোসেন সড়কের দুই পাশে খুলশী এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন ফোরামের সমন্বয়ক খোরশেদ আলম বলেন, ‘প্রতি গ্রীষ্ম মৌসুমেই নগরে পানিসংকট দেখা দেয়। কিন্তু ওয়াসা কেন সমস্যাটি সমাধান করছে না? সংস্থাটি চাইলেই এ সমস্যার সমাধান করতে পারে। এর জন্য দরকার কেবল আন্তরিকতা।’
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘কাপ্তাই হ্রদে পানিপ্রবাহ কমেছে। ফলে কর্ণফুলী ও হালদায় মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা দেখা দেয়। এ কারণে ওয়াসা জোয়ারের সময় পানি উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। এতে দৈনিক প্রায় ৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন কমে যায়। বর্তমানে মোহরা প্রকল্পের পানি পরিশোধন এবং অন্যান্য শোধনাগার থেকে পানি এনে তার সঙ্গে ব্লেন্ডিংয়ের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করছি।’