জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের (এনসিসি) সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বৈঠক আজ। আলোচনার টেবিলে অন্তত এক ডজন সংস্কার ইস্যুতে অনড় থাকবে দলটি। পাশাপাশি কমিশনের কাছে তিনটি বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইবে এনসিপি।
জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের এলডি হলে সকাল সাড়ে ১০টায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। এতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্ব দেবেন সহসভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ। অন্যদিকে এনসিপির নেতৃত্বে থাকবেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। যেসব ইস্যুতে এনসিপির অনড় অবস্থান থাকবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন, টানা দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়, সংসদে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ থাকা, প্রার্থী হওয়ার বয়স ন্যূনতম ২৩ বছর হওয়া উচিত, প্রার্থী মনোনয়নে দলগুলোকে ১০ শতাংশ তরুণ-তরুণীকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর পর্যন্ত ধরা যেতে পারে। পাশাপাশি এনসিপি বর্তমান সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান চাইছে। সেজন্য তারা গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তুলেছে। দলটির ব্যাখ্যা হচ্ছে, নির্বাচন একবারই হবে। সে নির্বাচনে যারা জয়ী হবে, তারা প্রথমে গণপরিষদ গঠন করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে। এই নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই পরে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। অর্থাৎ তাদের দিয়েই সংসদ গঠিত হবে। এনসিপি সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে অনমনীয় থাকবে বলে জানিয়েছে। এর আগে ২৩ মার্চ এনসিসির কাছে নিজেদের প্রস্তাবনা তুলে ধরে এনসিপি। তখন দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১১৩টি প্রস্তাবের বিষয়ে তারা পুরোপুরি একমত। ২৯টি প্রস্তাবে আংশিকভাবে একমত এবং ২২টি প্রস্তাবের বিষয়ে একমত হতে পারেনি। এ ছাড়া দুটি সুপারিশের বিষয়ে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তাদের ওই প্রস্তাবের ২৬ দিন পর আজ আলোচনার টেবিলে বসছে এনসিসি ও এনসিপি। ঐকমত্যের প্রশ্নে অন্তত ডজন খানেক সুপারিশের বিষয়ে দলীয় অবস্থান থেকে অনমনীয় থাকবেন বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্র্ষ কয়েক নেতা। তারা বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। দেশকে পরিবর্তনের জন্য এসব সংস্কারের বিকল্প নেই।’ এ প্রসঙ্গে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংস্কার কমিটির কো-অর্ডিনেটর সারোয়ার তুষার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কিছু মৌলিক বিষয় আছে যেগুলো রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক করে এবং প্রধান নির্বাহীর ক্ষমতাকে সংকুচিত করে, এসব বিষয়ে আমরা অনমনীয় থাকব। কিছু টেকনিক্যাল বিষয় আছে সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করব।’ সংস্কারের বাইরে তিনটি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাইবে বলে জানিয়েছে এনসিপি। প্রস্তাবনা জমা দেওয়ার দিন ওই প্রশ্নগুলো রাখা হয় এনসিসির কাছে। এখন আলোচনার টেবিলে সেসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি ১৬৬টি সুপারিশের সবগুলো জুলাই চার্টারে থাকবে না। আমরা একধরনের উদ্বেগ জানিয়েছি। ৫টি কমিশন আলাদা আলাদাভাবে তাদের প্রস্তাবগুলো দিয়েছে। সেখান থেকে সংক্ষেপ করে ১৬৬টি স্প্রেডশিটে এসেছে। সেখান থেকে আরও সংক্ষেপ করে জুলাই চার্টারে আসবে। যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো কেন বাদ দেওয়া হচ্ছে, কারণ ঐকমত্য হচ্ছে না। এসব যে জুলাই চার্টারে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না, তা নিয়ে কমিশন কী ভাবছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে গণমাধ্যমের তথ্য থেকে জানা গেছে ১১টি সংস্কার প্রস্তাব দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ ছাড়া বাস্তবায়নের কথা ভাবছে সরকার। এসব কোন প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হলো, তা-ও আমাদের জিজ্ঞাসা কমিশনের কাছে। পুলিশ সংস্কার কমিশন ও স্থানীয় সরকার কমিশনের সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে না পাঠানোর কারণও জানতে চেয়েছে এনসিপি।