বিশ্বজুড়ে চলমান আর্থিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক টানাপড়েন আর বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যেও চমক দেখিয়েছে রুশ রুবল। যুদ্ধকালীন অস্থিরতার মধ্যেও মার্কিন ডলারকে পেছনে ফেলে বিশ্বের সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করা মুদ্রায় পরিণত হয়েছে রুশ রুবল। ডলারের ওপর আস্থা কমে যাওয়াকে এ উত্থানের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, বছরের শুরু থেকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুবলের মান ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ ডলারের পতনে ভূমিকা রেখেছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, শুধু অন্যান্য মুদ্রা নয়, রুবল পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে ছাড়িয়ে গেছে মূল্যবান ধাতুগুলোকেও। সাধারণত অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময় যেসব সম্পদকে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ হিসেবে দেখা হয়, সেই সোনা ও রুপার দাম বেড়েছে যথাক্রমে ২৩ ও ১২ শতাংশ।
রুশ মুদ্রার এমন উত্থানের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে উচ্চ সুদের হার। বর্তমানে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারক হার ২১ শতাংশ। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও যুদ্ধকালীন অর্থনীতি শক্তিশালী করতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে রুশ কর্তৃপক্ষ। এছাড়া রুবলের মান নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে ক্রেমলিন। বিদেশি কোম্পানিগুলোকে দেশ থেকে তাদের অর্থ বা সম্পদ সরিয়ে নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিশেষ অ্যাকাউন্টে নগদ অর্থ রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করায়, মুদ্রা বাজারে রুবলের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্বের অন্যান্য অর্থনীতি যখন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে, তখন রুবলের এই উত্থান বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘লিবারেশন ডে’ ট্যারিফের কারণে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় সব দেশের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে, যার প্রভাব পড়েছে ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের ওপর। এই শুল্কনীতি নিয়ে বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নেতারাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জেপি মর্গানের প্রধান নির্বাহী জেমি ডাইমন বলেছেন, ‘এই শুল্কনীতির ফলাফল হিসেবে মন্দা দেখা দেওয়া সম্ভব।’
আর ব্ল্যাকরকের প্রধান নির্বাহী ল্যারি ফিঙ্কের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ইতিমধ্যেই সংকোচনের মুখে পড়েছে। ব্যাংকিং জায়ান্ট মর্গান স্ট্যানলির পূর্বাভাস, ইউরোর বিপরীতে ডলারের মান আরও কমতে পারে। ইউরো এরই মধ্যে ডলারের বিপরীতে ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে। তবে ওয়াল স্ট্রিটে অনেকে ডলারের এই পতনকে খুব একটা গুরুতর মনে করছেন না। সিটিগ্রুপের প্রধান নির্বাহী জেন ফ্রেজার বলেন, ‘সবকিছু শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাক হলে, দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য ভারসাম্য ও কাঠামোগত পরিবর্তনের পরও যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি থাকবে এবং ডলার রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবেই অবস্থান ধরে রাখবে।’
বিডি-প্রতিদিন/শআ