দীর্ঘ কয়েক দশক পর ইরান সফরে গেলেন সৌদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) তেহরানে ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এই সফরকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বৈঠকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, সন্ত্রাস দমন এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা প্রসারে দুই দেশের মতবিনিময় হয়। ইরানি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, শান্তি ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে এই আলোচনা ফলপ্রসূ হতে পারে।
খবর অনুসারে, সৌদি উচ্চপদস্থ রাজপরিবারের সদস্যের এটিই প্রথম ইরানে সফর নয়। এর আগে ১৯৯৭ সালে রাজা আব্দুল্লাহ তৎকালীন সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির আমন্ত্রণে ইরান গিয়েছিলেন। এর পর দীর্ঘ সময় ধরে সৌদি-ইরান সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে পড়ে, বিশেষ করে ২০১৬ সালে সৌদি আরবে এক শিয়া আলেমের মৃত্যুদণ্ড ও তার জেরে তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলার পর থেকে সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন হয়।
এই সময় দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, যার বড় প্রেক্ষাপট ছিল ইয়েমেন। সৌদি আরব ও ইরান সেখানে বিপরীত পক্ষকে সমর্থন দেয়। এর ফলে সৌদি ও আমিরাতের তেলের অবকাঠামোতে হামলা হয়।
তবে গত দুই বছরে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশ একটি ঐতিহাসিক চুক্তিতে পৌঁছায়। এরপর থেকেই সম্পর্ক উষ্ণ হতে থাকে। গত বছর সৌদি ও ইরান প্রথমবারের মতো যৌথ নৌ মহড়ায় অংশ নেয় এবং দুই দেশের সামরিক প্রধানরা একে অপরের দেশে সফর করেন।
এই সফরের প্রেক্ষাপটে আরও একটি বড় বিষয় হচ্ছে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক আলোচনার অগ্রগতি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার হুমকি দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ইরানও সতর্ক করে দিয়েছে—যে কোনো ধরনের আগ্রাসন হলে তা গোটা অঞ্চলে যুদ্ধের রূপ নিতে পারে।
এমন উত্তেজনাপূর্ণ সময়েই সৌদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর এই সফর যা একদিকে যেমন শান্তির বার্তা বহন করছে, তেমনি ইঙ্গিত দিচ্ছে—মধ্যপ্রাচ্যের দুই শক্তিধর দেশ একে অপরকে নতুন করে বুঝতে চাইছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল