বাংলাদেশে যে নির্মাতার ছবিতে প্রথম গ্রাফিক্স ব্যবহার করা হয় তিনি হলেন ইবনে মিজান। সেই সত্তরের দশকে তিনিই দেখিয়ে ছিলেন আকাশ দিয়ে মানুষের উড়ে যাওয়া, আবার পানির নিচে মানুষের বসবাসসহ আরও অনেক চমকদার দৃশ্য, যা দেখে তখনকার সিনেমা দর্শকরা বিপুল আনন্দে বিনোদিত হয়েছেন। ফোক-ফ্যান্টাসি ছবির অনন্য কারিগর ছিলেন তিনি। সামাজিক অ্যাকশনধর্মী ছবিতেও তাঁর সাফল্য রয়েছে ব্যাপক।
যখন যে ছবিই করেছেন, ব্যবসায়িক সাফল্যের বরপুত্র হয়ে এসেছেন ইবনে মিজান। দর্শকপ্রিয় পরিচালক হিসেবে তার অবস্থান ছিল অনন্য উচ্চতায়। ইবনে মিজান পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র উর্দু ভাষায় নির্মিত ১৯৬৪ সালে ‘আওর গম নেহি’ মুক্তি পায়নি। তার নির্মিত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি ‘একালের রূপকথা’ মুক্তি পায় ১৯৬৬ সালে।
তিনি ছিলেন একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক-প্রযোজক। সত্তর ও আশির দশকে এ দেশের ফোক-ফ্যান্টাসি ও অ্যাকশন ছবির অপ্রতিদ্বন্দ্বী নির্মাতা ছিলেন। লোককাহিনি আর রূপকথাকে সিনেমার রুপালি পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছেন সুনিপুণ দক্ষতায়। বিশুদ্ধ বিনোদনধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণের এক অসাধারণ কারিগর ছিলেন তিনি। ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের রূপকথার জাদুকর।
পোশাকি চলচ্চিত্রের সুনিপুণ নির্মাতা ইবনে মিজান ১৩৩৭ বঙ্গাব্দের ৮ আশ্বিন সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাস করেন। তাঁর বাবা মিজানুর রহমান ছিলেন জাঁদরেল পুলিশ অফিসার। বড়ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুখলেছুর রহমান, বড় বোন অধ্যাপক মুসলেমা খাতুন, ছোট বোন বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক মকবুলা মঞ্জুর, আরেক ছোট ভাই চলচ্চিত্র পরিচালক আজিজ মেহের। মোট সাত ভাইবোন ছিলেন তাঁরা। আমাদের চলচ্চিত্রের কীর্তিমান এই মানুষটি ১৯৯০ সালের দিকে চলচ্চিত্র ও দেশ ছেড়ে সপরিবারে আমেরিকায় চলে গিয়েছিলেন। বেছে নিয়েছিলেন নিভৃত জীবন। আর এই নিভৃতেই ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার করোনা শহরে মৃত্যুবরণ করেন।
ইবনে মিজান পরিচালিত দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- আবার বনবাসে রূপবান, কমল রানীর দিঘী, জংলী মেয়ে, রাখাল বন্ধু, জরিনা সুন্দরী, পাতালপুরীর রাজকন্যা, আমির সওদাগর ও ভেলুয়া সুন্দরী, শহীদ তিতুমীর, নাগ নাগিনীর প্রেম, কত যে মিনতি, ডাকু মনসুর, নিশান, জিঘাংসা, দুই রাজকুমার, শাহজাদা, তাজ ও তলোয়ার, এক মুঠো ভাত, পাতাল বিজয়, লাইলী মজনু, পুনর্মিলন, বাগদাদের চোর, রাজকুমারী, রাজনর্তকী, বসন্তমালতী, বাহাদুর, বাহাদুর নওজোয়ান, বাহাদুর মেয়ে, জংলী রানী, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, রাজবধূ, সাগর কন্যা, রঙ্গীন রাখাল বন্ধু, আলাল দুলাল, সাপুড়ে মেয়ে, নাগজ্যোতি, জলপরী প্রভৃতি।