নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই পথ চলতে চায় বিএনপি। এজন্য আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে যাতে কোনো দূরত্ব তৈরি না হয় এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবে দলটি। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি দিলেও সরকার যেন বিব্রত বা চাপে না পড়ে সে বিষয়ে সতর্ক থাকবে। এমনকি নির্বাচন ডিসেম্বরের পর দুই-এক মাস এদিক-সেদিক হলে মেনে নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। কঠোর কর্মসূচিতে গেলে পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা সুযোগ নিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে। এমন আশঙ্কায় বর্তমান সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই নির্বাচন করতে চায় বিএনপি। দলের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রথম থেকেই আমরা বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করে আসছি। কিন্তু নির্বাচন কবে হবে তা দেশবাসীকে সুস্পষ্ট করে জানাতে হবে। মানুষ দীর্ঘদিন ভোট দিতে পারেনি।
প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ডিসেম্বর কিংবা তারও আগে নির্বাচন সম্ভব। আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা শুরু থেকেই সমর্থন দিয়ে আসছি। এখনো দিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই এ সরকার যেন কোনোক্রমেই ব্যর্থ না হয়। কাজেই সরকারেরও উচিত আর দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করা। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গত বুধবার বৈঠকে ‘নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ও সুস্পষ্ট রোডম্যাপ’ চেয়েও পায়নি বিএনপি। বৈঠকের পর দলের পক্ষ থেকে জানানো হয় বিএনপি এতে ‘অসন্তুষ্ট’। বিএনপির এমন প্রতিক্রিয়ার পর রাজনৈতিক মহলসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন জাগে- নির্বাচন আদায়ে বিএনপি এখন কী করবে? কোন পথে যাবে দলটি। সংশ্লিষ্টরা জানান, ৫ আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র নতুন করে কোনো ধরনের সংকট বা জটিলতায় পড়ুক এমন পরিস্থিতি সতর্কভাবে এড়িয়ে চলবে বিএনপি। এই মুহূর্তে কঠোর আন্দোলনে গেলে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যা স্বৈরাচারী শক্তির দোসররা কাজে লাগিয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে। এর দায়ভার যেন বিএনপির ওপর না আসে, সে বিষয়ে দলটি সতর্ক থাকবে। তবে, নির্বাচনি মাঠ গোছানোর জন্য সারা দেশে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি দেবে। এসব কর্মসূচি থেকে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ও সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চাওয়া হবে। নির্বাচন যদি জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতেও যায় সে পর্যন্ত তারা ধৈর্য ধরতে পারে। তবে সেটি কোনোভাবেই মার্চের পর যেতে পারবে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্চে নির্বাচন হওয়ার সুযোগও নেই। সে সময়ে পবিত্র রমজান মাস। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা। এরপর বৈরী আবহাওয়ায় বৃষ্টি-বাদলের কারণে নির্বাচন সম্ভব নয়। সবমিলিয়ে সর্বোচ্চ ফেব্রুয়ারি ভোটের আয়োজন করতে হবে। বিএনপি নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে বিরোধী অনেক নেতা-কর্মীকে গুম-খুন, নির্যাতন করেছে। সর্বশেষ হাজারো ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অথচ এসব ঘটনায় জড়িত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি সরকার। অনেকে পালিয়ে গেছেন। বিষয়টি জনগণ ভালোভাবে দেখছে না। এ ছাড়া গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে দৃশ্যমান কিছু দেখা যাচ্ছে না। সরকারের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনাই প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। কারণ, গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা ভোট দিতে উদ্গ্রীব হয়ে আছে। সরকারের উচিত হবে জনগণের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দেওয়া। দ্রুত তা না করলে সরকার জনগণের আস্থা হারাতে পারে।