বিশ্বের প্রায় সব সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে বক্স অফিস ব্যবস্থা চালু রয়েছে। অথচ আমাদের দেশে তা নেই। ফলে ঢাকাই সিনেমায় টিকিট বিক্রির হিসাব ও ছবির ব্যবসায়িক সাফল্যের জায়গাটি অস্বচ্ছতার কবলেই পড়ে আছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চলচ্চিত্র প্রযোজকরা। চলচ্চিত্রকাররা বলেছেন, ঢাকাই সিনেমার বক্স অফিস বাক্সবন্দি হয়েই রয়েছে এবং বক্স অফিস গড়ে না ওঠার কারণ হিসেবে চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্টদের কথায় উঠে এসেছে, ‘শুভংকরের ফাঁকি’র কথা।
বক্স অফিস ও ই-টিকেটিং ব্যবস্থার অভাবে ঢাকাই সিনেমার আয়ের ক্ষেত্রে চলছে শুভংকরের ফাঁকি। টিকিট বিক্রি ও সিনেমার সফলতা-ব্যর্থতা নির্ধারণের অন্যতম ব্যবস্থা হলো বক্স অফিস ও ই-টিকেটিং ব্যবস্থা। বিশ্বের প্রায় সব সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে এ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। অথচ আমাদের দেশে তা নেই। ফলে ঢাকাই সিনেমাতে টিকিট বিক্রির হিসাব ও ছবির ব্যবসায়িক সাফল্যের জায়গাটি অস্বচ্ছতার কবলেই পড়ে আছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চলচ্চিত্র প্রযোজকরা। চলচ্চিত্রকাররা বলছেন, ঢাকাই সিনেমার বক্স অফিস বাক্সবন্দি হয়েই রয়েছে এবং বক্স অফিস গড়ে না ওঠার কারণ হিসেবে চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্টদের কথায় উঠে এসেছে, ‘শুভংকরের ফাঁকি’র কথা। ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া জনপ্রিয় ‘আয়নাবাজি’ সিনেমার পরিচালক অমিতাভ রেজা তখন জানান, মাল্টিপ্লেক্সের বাইরের হলগুলো থেকে কত আয় করেছে তার সঠিক চিত্র তাদের কাছে নেই। এমনকি আয়ের যে অঙ্কটা দেখানো হয়েছে সে অনুযায়ী অর্থও প্রযোজক পাননি। এই অস্বচ্ছতার সুযোগে অনেক হল মালিক ও পরিবেশক সিনেমার আয় বাড়িয়ে বা কমিয়ে বলেন। কারণ, তারা জানেন সেটাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো পর্যাপ্ত তথ্য কারও হাতে নেই। একই অভিযোগ করেছিলেন ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রচণ্ড দর্শকপ্রিয় ‘মনপুরা’র সিনেমার নির্মাতা গিয়াসউদ্দীন সেলিম। চলতি বছরে ঈদে মুক্তি পাওয়া হিট সিনেমা ‘বরবাদ’-এর পরিচালক মেহেদী হাসান হৃদয়ও সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সিনেমাটি এখন পর্যন্ত কত আয় করেছে তা তিনি জানেন না। অথচ মুখে মুখে প্রচার আছে এখন পর্যন্ত এই সিনেমাটির আয় ২৮ কোটি ছাড়িয়েছে। চলচ্চিত্রশিল্পের ক্ষেত্রে সিনেমা নির্মাণ যতটা গুরুত্বপূর্ণ, একই সঙ্গে এর বিপণন ও প্রদর্শনীও সমান গুরুত্বপূর্ণ। একটি সিনেমার লাভ কিংবা লোকসান- সবই নির্ভর করে টিকিট বিক্রির ওপর। কিন্তু হাতে হাতে টিকিট বিক্রির ফলে হিসাবনিকাশে স্বচ্ছতার ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, ভারতে বক্স অফিস কার্যকরে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে ভারতের প্রযোজক, পরিবেশকদের সংগঠন দ্য ইন্ডিয়ান মোশন পিকচার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন (ইমপা)। বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংগঠনের অভাব না থাকলেও বক্স অফিস কার্যকরে তাদের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এককভাবে কেউ চাইলে বক্স অফিস কার্যকর করা কঠিন। এতে প্রভাবিত হয়ে একপেশে প্রতিবেদন দেওয়ার সুযোগ থাকে। তাই সরকারি তদারকিরও প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রযোজক, পরিবেশক, হল মালিকদের এ ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ভারতে প্রেক্ষাগৃহগুলো সিনেমার প্রতিদিনের টিকিট বিক্রির তথ্য পরিবেশকদের পাঠিয়ে দেয়।
সেই হিসাব ইমপা কার্যালয়ে জমা হয়। সেখানে প্রতিটি সিনেমার হিসাব টেনে আয়ের হিসাব হয়। ফাঁকির কোনো সুযোগ নেই। এ দেশের প্রযোজক, পরিবেশকরা সম্মিলিতভাবে কাজ করলে বাংলাদেশেও সম্ভব। খ্যাতনামা চলচ্চিত্রকার-সমালোচক-গবেষক মতিন রহমানের কথায়- বক্স অফিসের রেটিং সিস্টেমের যে বিষয়, সেটি করার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে নেই। এটা বলিউড এবং হলিউডে আছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রযোজনা সংস্থাগুলো নিজেদের মতো করে বলে, বক্স অফিস হিট। আর যারা ফিল্ম ক্রিটিক কিংবা সেই প্রোডাকশন হাউসের বিপক্ষে থাকেন তারা বলেন- ফ্লপ। যারা হিট বলেন, তাদের কথার স্বচ্ছতা নেই, যারা ফ্লপ বলেন তাদের কথারও স্বচ্ছতা নেই। আমরা দুটোই মেনে নেব। দুটোই সত্য- দুটোই মিথ্যা। এটা একটা বিভ্রান্তির মধ্যে থাকা, এভাবে চলতে পারে না।’ বক্স অফিস তৈরি না হওয়ার কারণ হিসেবে মতিন রহমান পরস্পরের মধ্যেই হিংসা এবং বিদ্বেষ রয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘এটি তৈরির ব্যাপারে কারও কোনো উৎসাহ নেই। প্রয়োজন হলে প্রযোজক সমিতি, পরিচালক সমিতি, তথ্য মন্ত্রণালয় আছে, তাদের দ্বারা সংগঠিত হবে বক্স অফিসের বিষয়টি। এর মধ্য দিয়েই সিনেমার আয়ের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি।’