অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ের কারণে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় গত এক বছরে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন ৬৫ জন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রসিংগুলোতে গেটম্যান না থাকায় অসাবধানতাবশত পারাপার হতে গিয়ে ঘটছে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রতিদিন ৫৪টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রী আনা-নেওয়া করে। জেলার ১৩৫টি রেল ক্রসিংয়ের মধ্যে গেটম্যান আছে ৯৫টিতে। অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ৪০টি। এদিকে, নওগাঁর সান্তাহারে রেললাইনের ওপর বসছে বাজার। নড়বড়ে সিগন্যাল বাতি ইট ঝুঁলিয়ে চলে সচল করার চেষ্টা। জেলায় ৩২টি গেটের মধ্যে ১৬টিতে নেই গেটম্যান। সান্তাহার থেকে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের ৭০ কিলোমিটার রেলপথে এমন অব্যবস্থাপনায় চলছে যুগের পর যুগ। দুর্ঘটনা রোধে অরক্ষিত রেল ক্রসিংগুলোতে গেটম্যান নিয়োগের দাবি সংশ্লিষ্টদের। অসতর্কতার কারণে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেন রেলওয়ে পুলিশের সান্তাহার জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান।
পাবনাতে রেল ক্রসিং আছে ১৩০টি, এর মধ্যে ২২টি অরক্ষিত। কয়েকটি স্থানে রেল ক্রসিং থাকলেও সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে, নেই গেটম্যানও। এ কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ ও যানবাহন। নাটোরে ৫৪ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ৩০টি অরক্ষিত। জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে কয়েকটি গেটে পাকা সড়ক নির্মাণ করা হলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নজরে না আসায় সেগুলোতে কোনো গেটম্যান নেই। স্থানীয়রা ট্রেন আসার সময় ব্যক্তি উদ্যোগে কোনো কোনো গেটের দুই পাশে বাঁশ ঝুঁলিয়ে রাখছেন। বগুড়ায় ৭০ কিলোমিটার রেলপথে ২১টি অনুমোদনহীন রেল ক্রসিং আছে। অনুমোদন আছে; কিন্তু গেটম্যান নেই এমন রেল ক্রসিং আছে ১০টি। ফলে প্রতিটি রেল ক্রসিং যেন এক একটি মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক মামুনুল ইসলাম জানান, রেল ক্রসিংগুলোতে বিভিন্ন সতর্কতামূলক বার্তা দিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলানো হলেও সাধারণ মানুষ ও যানবাহন চালকরা সচেতন না হওয়ায় বাড়ছে দুর্ঘটনা। রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগ নিয়ে গঠিত পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের দূরত্ব ১ হাজার ৫৬৮ কিলোমিটার। এ অঞ্চলে মোট গেটের সংখ্যা ১ হাজার ৫৮২টি। এর মধ্যে ৮১৮টিতে নেই গেটম্যান। গত এক বছরে বিভাগের আট জেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে নারী শিশুসহ মারা গেছেন ৬৫ জন।