দোয়ার শক্তি অব্যর্থ। মহান আল্লাহর কাছ থেকে চাওয়া-পাওয়ার বিশেষ উপায় দোয়া। পবিত্র কোরআন, হাদিস ও বুজুর্গানের বহুল চর্চিত-পরীক্ষিত আমলে ‘দোয়ার শক্তি’র প্রকৃত ধারণা মেলে। দোয়া অর্থ ডাকা বা চাওয়া।
মহান আল্লাহর নির্দেশ ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’
(সুরা : মু’মিন, আয়াত : ৬০)
তাঁরই কথা ‘যখন কোন প্রার্থনাকারী আমাকে ডাকে, তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিই।’
(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৬)।
প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘তিন শ্রেণির মানুষের দোয়া কবুল হওয়া অবশ্যম্ভাবী : ক. পিতা-মাতার দোয়া, খ. মুসাফিরের দোয়া এবং গ. মজলুমের দোয়া।’
(আবু দাউদ : ১৫৩৬)।
অপর বর্ণনায় আছে ‘রোজাদারের দোয়া’।
‘রহমতের সওগাত’ রমজান। মাসটি অন্তত চারটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র : (ক) কোরআন নাজিলের মাস, (খ) এ মাসেই ‘লাইলাতুল কদর’, (গ) শয়তান বন্দি থাকে, (ঘ) রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মহিমায় সমুজ্জ্বল।
দোয়া কবুলের মাস রমজান সামনে রেখে তুলে ধরছি—নবীদের মোনাজাত।
১. আদম (আ.) : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার রব! আমি নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন এবং আমার প্রতি দয়া না করেন, তাহলে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৩)
২. নুহ (আ.) : ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি জালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।’
(সুরা : নুহ, আয়াত : ২৮)
৩. ইবরাহিম (আ.) : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে প্রভু, আমাদের মোনাজাত কবুল করুন।
নিশ্চয়ই আপনি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ। প্রভু আমার, আমাদের উভয়কে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধর থেকেও একটি অনুগত দল সৃষ্টি করুন, আমাদের হজের রীতিনীতি বলে দিন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি তাওবা কবুলকারী, দয়ালু।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১২৭-১২৮)
৪. হুদ (আ.) : তিনি দোয়া করেন, ‘আমি নির্ভর করি আমার ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর ওপর। এমন কোনো জীবজন্তু নেই যে তাঁর পূর্ণ আয়ত্তাধীন নয়। আমার প্রতিপালক সরল পথে আছেন।’
(সুরা : হুদ, আয়াত : ৫৬)
৫. লুত (আ.) : তিনি দোয়া করেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে এবং আমার পরিবারকে আমার জাতি যা করে তা থেকে মুক্তি দিন।’
(সুরা : আশ শুআরা, আয়াত : ১৬৯)
৬. সুলাইমান (আ.) : ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার রব, আপনি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন তার জন্য আমাকে আপনার শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দিন। আর আমি যাতে এমন সৎকাজ করতে পারি, যা আপনি পছন্দ করেন। আর আপনার অনুগ্রহে আপনি আমাকে আপনার সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।’
(সুরা : নামল, আয়াত : ১৯)
৬. ইউনুস (আ) : তিনি দোয়া করেন, ‘হে আমার প্রতিপালক, আপনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, আপনি পবিত্র, মহিমাময়; নিশ্চয়ই আমি (নিজের প্রতি) অবিচারকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।’
(সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৮৭)
৭. ইউসুফ (আ.) : ইরশাদ হয়েছে, হে পালনকর্তা! আপনি আমাকে রাষ্ট্রক্ষমতাও দান করেছেন এবং আমাকে বিভিন্ন তাৎপর্যসহ ব্যাখ্যা করার বিদ্যা শিখিয়ে দিয়েছেন। হে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের স্রষ্টা, আপনিই আমার কার্যনির্বাহক ইহকাল ও পরকালে। আমাকে ইসলামের ওপর মৃত্যুদান করুন এবং আমাকে স্বজনদের সঙ্গে মিলিত করুন।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১০১)
৮. জাকারিয়া (আ.) : তিনি দোয়া করেন, ‘হে আমার পালনকর্তা। আমাকে একা রাখবেন না আর আপনিই তো সর্বোত্তম ওয়ারিশ।’
(সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৮৯)
তিনি আরো দোয়া করেন, ‘হে আমার পালনকর্তা। আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পবিত্র-পুণ্যবান সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি দোয়া শ্রবণকারী।’
(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩৮)
৯. শুআইব (আ.) : ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার প্রতিপালক প্রত্যেক বস্তুকে স্বীয় জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে আছেন। আল্লাহর প্রতিই আমরা ভরসা করেছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ফয়সালা করে দিন। আপনিই শ্রেষ্ঠতম ফয়সালাকারী। (সুরা : আরাফ, আয়াত: ৮৯)
১০. মুসা (আ.) : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার রব, আমার অন্তর প্রশস্ত করে দিন এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। আর আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ২৫-২৭)
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ইবরাহিম, দাউদ, আইয়ুব, মুসা, ঈসা (আ.)-সহ অসংখ্য নবীর অসংখ্য হৃদয়গ্রাহী ও অব্যর্থ মোনাজাত। অথচ হায় আফসোস! আমরা অনেকেই মহান আল্লাহর কাছে চাওয়ার এবং তাঁকে ডাক দেওয়ার যোগ্যতাই হারিয়ে ফেলেছি।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর