রাসুলে আকরাম (সা.)-এর স্মৃতি ও সান্নিধ্যে ধন্য পবিত্র মদিনা নগরী। এই নগরীতেই শুয়ে আছেন মহানবী (সা.)। যদিও রওজা মোবারকের জিয়ারত হজের অংশ নয়, তবে তা যেকোনো মুসলমানের কাছে পরম প্রার্থিত বিষয়। উত্তম হলো যে মদিনায় গমন করবে সে রওজা জিয়ারতের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে নববীতে গমনেরও নিয়ত করে নেবে।
কেননা বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা মসজিদে নববীর মর্যাদা প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার এ মসজিদে নামাজ আদায় (মক্কার) মসজিদুল হারাম ছাড়া অন্য যেকোনো মসজিদে নামাজ আদায় অপেক্ষা এক হাজার গুণ উত্তম।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৯০)
নবী করিম (সা.) আল্লাহর কাছে মদিনার সব কিছুতে বরকত দানের দোয়া করেন। তিনি আল্লাহর কাছে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! মক্কায় যতটুকু বরকত রয়েছে, মদিনায় তার দ্বিগুণ বরকত দাও।’
(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৩৯২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনাকে দারুল ঈমান বা ঈমানের আবাস আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ঈমান মদিনার দিকে ফিরে আসবে, যেভাবে সাপ তার গর্তের দিকে ফিরে আসে।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৭৬)
রওজা জিয়ারতের শিষ্টাচার
কোরআন-হাদিসের আলোকে মহানবী (সা.)-এর রওজা জিয়ারতের কিছু শিষ্টাচার হলো—
১. জিয়ারতকারী পবিত্র শরীরে পবিত্র কাপড় পরিধান করে যাবে।
২. ব্যক্তি জিয়ারতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর থেকেই অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করতে থাকবে।
সে আল্লাহর কাছে জিয়ারত কবুলের দোয়া করবে।
৩. জিয়ারতকারী নবীজি (সা.)-এর রওজায় প্রবেশের আগেই মন থেকে জাগতিক সব চিন্তা-ভাবনা দূর করে দেবে এবং তাঁর ভালোবাসায় অন্তর পূর্ণ করে নেবে।
৪. নবী (সা.)-এর প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নিয়ে রওজায় প্রবেশ করবে। ডান পা দিয়ে প্রবেশ করবে। লক্ষ রাখবে, এমন কোনো আচরণ যেন প্রকাশ না পায় যা নবীজি (সা.)-এর মর্যাদার পরিপন্থী।
৫. নবীজি (সা.)-কে অনুচ্চ আওয়াজে সালাম দেবে। কোনোভাবেই আওয়াজ উঁচু করবে না।
৬. জিয়ারতকারী নবীজি (সা.)-এর রওজার দিকে ফিরে দাঁড়াবে, তবে সামান্য দূরত্ব বজায় রাখবে। অন্তরকে মহানবী (সা.)-এর চিন্তা ও ভালোবাসায় বিভোর করবে।
৭. যে কক্ষে নবীজি (সা.) শুয়ে আছেন সেটি, তাঁর মিম্বার ইত্যাদি স্পর্শ করা, তাতে চুমু খাওয়া এবং এগুলো তাওয়াফ করা থেকে বিরত থাকবে।
৮. আল্লাহর কাছে যেভাবে কোনো কিছু চাওয়া হয় সেভাবে নবীজি (সা.)-এর কাছে চাইবে না। কোনো চাওয়ার থাকলে মহান আল্লাহর কাছেই চাইবে। দোয়া করার সময় কিবলামুখী হয়ে দোয়া করবে।
৯. রওজায়ে আতহারে দীর্ঘ সময় অবস্থান করা, সেখানে ভিড় করে থাকা এবং ধাক্কাধাক্কি করা নবীজি (সা.)-এর মর্যাদার পরিপন্থী। যতক্ষণ অবস্থান করবে প্রশান্তির সঙ্গে অবস্থান করবে। ফেরার সময়ও দরুদ পাঠ করতে থাকবে।
১০. সম্ভব হলে রিয়াজুল জান্নাতে দুই রাকাত (কমপক্ষে) নামাজ আদায় করবে।
(আল-ইজাহ ফি মানাসিকিল হাজ্জি ওয়াল ওমরাহ, পৃষ্ঠা-৪৪৬-৪৫০)
অভিজ্ঞ আলেমরা বলেন, রওজা জিয়ারতকারী পূর্ণ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিয়ে মহানবী (সা.)-এর রওজার সামনে দাঁড়াবে। প্রথমে সে দরুদে ইবরাহিম পাঠ করবে। অতঃপর আল্লাহর কাছে বিনীত হয়ে দোয়া করবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন