মুসলমান মুসলমানের ভাই। নবীজি (সা.) তাদের উপমা দিয়েছেন এক দেহের সঙ্গে। অর্থাৎ দেহের কোনো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হলে যেমন সারা দেহ জ্বরে আক্রান্ত হয়, তেমনি গোটা মুসলিম উম্মাহও তাদের কোনো মুসলিম ভাইয়ের বিপদে শান্তিতে ঘুমাতে পারে না। ইসলামের প্রতি মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের কিছু হক আছে, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হক হলো, তাকে জালিমের হাত থেকে রক্ষা করা।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, বারাআ ইবনে আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত, বিশ্বনবী (সা.) আমাদের সাতটি কাজ করতে বলেছেন এবং সাতটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদের রোগীর সেবা করার, জানাজায় অংশ গ্রহণ করার, হাঁচি দিলে তার জবাব দেওয়ার, কসম পুরা করায় সহযোগিতা করার, মজলুমকে সাহায্য করার, সালামের বিস্তার করার এবং কেউ দাওয়াত দিলে তা কবুল করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি আমাদের নিষেধ করেছেন স্বর্ণের আংটি পরতে, রুপার পাত্র ব্যবহার করতে, ঘোড়ার পিঠের ওপরে রেশমি গদি ব্যবহার করতে এবং ‘কাসসিয়া’ বা পাতলা রেশমি কাপড় এবং দ্বিবাজ ব্যবহার করতে। আবু আওয়ানাহ ও শায়বানী আশআস সূত্রে সালামের বিস্তারের কথা সমর্থন করে বর্ণনা করেন।
(বুখারি, হাদিস : ৫১৭৫)
তাই কোনো মুসলিম যেমন তার অন্য কোনো মুসলিম ভাইয়ের ওপর জুলুম করতে পারে না, তেমনি তাকে কোনো শত্রুর হাতে জুলুমের শিকার হতে দেখে বসে থাকতে পারে না। ঈমানের দাবি হলো, নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে মজলুমের পাশে দাঁড়ানো। তাকে জুলুমের হাত থেকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করা। কেননা নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমান একজন অন্যজনের ভাই।
সে তার ওপর কোনো রকম জুলুম-অত্যাচার করতে পারে না এবং শত্রুর কাছেও তাকে সমর্পণ করতে পারে না বা তাকে অসহায়ভাবে ছেড়ে দিতে পারে না। কোনো লোক তার ভাইয়ের প্রয়োজন মেটানোর কাজে যে পর্যন্ত লেগে থাকে, আল্লাহ তাআলাও তার প্রয়োজন মিটিয়ে দেন। কোনো মুসলমান ব্যক্তির কোনো অসুবিধা যে লোক অপসারণ করে দেয়, আল্লাহ তাআলা কিয়ামত দিবসে তার অসুবিধাগুলোর মধ্য থেকে একটি অসুবিধা দূর করে দেবেন। কোনো মুসলমান ব্যক্তির দোষত্রুটি যে লোক গোপন করে রাখে আল্লাহ তাআলা কিয়ামত দিবসে তার দোষত্রুটি গোপন করে রাখবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৪২৬)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ ও আবু ত্বালহা ইবনু সাহল আল-আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অপর মুসলিমের মান-ইজ্জত নষ্ট হওয়ার স্থানে তাকে ত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে সাহায্য করা হতে বিমুখ থাকবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য কামনা করে।
আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের মান-ইজ্জত নষ্ট হওয়ার স্থানে তাকে সাহায্য করে আল্লাহ তাকে এমন স্থানে সাহায্য করবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য প্রত্যাশা করে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৮৭)
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মজলুমের পক্ষে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনে মজলুমকে রক্ষায় জালিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “আর তোমাদের কী হলো যে তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকে যার অধিবাসীরা জালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।” (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭৫)
জুলুমের শিকার মজলুমরা যেমন মহান আল্লাহর কাছে ধৈর্যের পরীক্ষা দেয়, তেমনি তখন তাদের অপর মুসলিম ভাইরাও পরীক্ষায় থাকে, তারা তাদের মুসলিম ভাইদের সহযোগিতায় কী পদক্ষেপ নিচ্ছে আল্লাহ তা দেখেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে লোক সব! তোমরা তো অবশ্যই এই আয়াত তিলাওয়াত করে থাকো : ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের নিজেদেরই কর্তব্য তোমাদেরকে সংশোধন করা। যদি তোমরা সৎপথে থাকো তাহলে যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তারা তোমাদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১০৫) অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, মানুষ যদি কোনো অত্যাচারীকে অত্যাচারে লিপ্ত দেখেও তার দুহাত চেপে ধরে তাকে প্রতিহত না করে তাহলে আল্লাহ তাআলা অতি শিগগিরই তাদের সবাইকে তাঁর ব্যাপক শাস্তিতে নিক্ষিপ্ত করবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২১৬৮)
নাউজুবিল্লাহ, অতএব, প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব নিজের সবটুকু নিয়ে মজলুমের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা। মহান আল্লাহর ওপর আস্থা রাখা এবং তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে মজলুমের পক্ষে দাঁড়ানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন