সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত এক নারী ‘ক্রিম আপা’ নামে পরিচিত শারমীন শিলা। কখনো মেয়ের চুল কড়া রাসায়নিকে রং করে দেন, কখনো পুরো মাথা ন্যাড়া করে দেন। কখনো আবার কান ফুটো করার বন্দুক দিয়ে মেয়ের কান ফুটো করিয়ে ভারী দুল পরান, মুখে কুলি ফেলেন, খাবার কেড়ে নেন, চড় মারেন—এসবই করেন ক্যামেরার সামনে।
ভিডিওতে দেখা যায়, দেড় বছর বয়সী মেয়েটি কখনো চুপচাপ থাকে, কখনো হাসে আবার মাঝে মাঝে অস্বাভাবিকভাবে কাঁদে। মেয়েটির মধ্যে ভয় আর আতঙ্ক স্পষ্ট।
ফেসবুক বা টিকটকে এসব ভিডিও আপলোড করে শারমীন শিলা বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। তার আসল পেশা হলো বিউটি পারলারের ব্যবসা, সাভারের বাইপাইলে রয়েছে ‘ক্রিম আপা বিউটি পারলার’। তিনি গায়ের রং ফর্সা করার ক্রিম বিক্রি করেন, আর এ নিয়েই মূলত তার কনটেন্ট তৈরি। তবে রান্নাবান্না, খাওয়াদাওয়ার ভিডিওতেও শিশু সন্তানদের জড়ান তিনি।
১২ বছরের ছেলেকে কিছুটা ভালো ব্যবহার করলেও ছোট মেয়েটির ক্ষেত্রে তার আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ। শিশু অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংগঠন ‘একাই একশো’র পক্ষ থেকে এ নিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সম্প্রতি একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত কিশোর সাদাত রহমানসহ অন্যরা এ উদ্যোগ নেন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে সাভারের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ওই নারীকে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। সন্তোষজনক জবাব না এলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
শারমীন শিলা অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গণমাধ্যমে তিনি দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে হিংসা ও ষড়যন্ত্র চলছে। সন্তানদের তিনি ভালোবাসেন, তাদের নির্যাতনের প্রশ্নই আসে না। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভিডিও আর করবেন না বলেও আশ্বাস দেন।
তবে সাদাত রহমান বলেন, অনলাইন দুনিয়ায় শিশুদের সুরক্ষায় এখনই নীতিমালা তৈরি করা জরুরি। যাতে নির্দিষ্ট বয়সের আগে কোনো শিশুকে দিয়ে কেউ ‘ভিউ ব্যবসা’ করতে না পারে, বা সরকারের অনুমতি ছাড়া এমন কনটেন্ট প্রকাশ না করতে পারে। তা না হলে শিশুরা শৈশবের আনন্দ হারিয়ে ফেলবে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক শিশু সুরক্ষা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক আবদুল্লা আল মামুন বলেন, ক্রিম আপার আচরণকে নির্যাতন বলা না গেলেও তা শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য ক্ষতিকর। তিনি অভিভাবকের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না, যা নৈতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য নয়।
শিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে—সন্তান কি কনটেন্ট, না ভালোবাসার মানুষ? সমাজ ও রাষ্ট্রের সামনে এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সময় এখনই।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম