জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথ দৃশ্যমান করতে আসছে ছয় মাসের নির্বাচনি রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা। ইতোমধ্যে নির্বাচনি রোডম্যাপের খসড়া প্রস্তুত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের এবং পরের কার্যক্রমের ধারাবাহিক বর্ণনা থাকছে এই কর্মপরিকল্পনায়। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করেই জুন-জুলাইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই রোডম্যাপ ঘোষণা করবে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। এক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শেষ দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রেখে ৬০-৬৫ দিন হাতে রেখেই অক্টোবরে নির্বাচন তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে আগেও ডিসেম্বরে ভোট করতে নভেম্বরের দ্বিতীয়-তৃতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার নজির রয়েছে।
এদিকে অক্টোবরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পাশাপাশি আগস্ট-সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ; জুনের মধ্যে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা; জুলাই-আগস্টের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন গেজেট প্রকাশ করার পরিকল্পনা নিয়ে ভোটের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের টার্গেট ধরেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ভোটের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শেষ করে জুন-জুলাইয়ে ‘কর্মপরিকল্পনা বা অ্যাকশনপ্ল্যান’ ঘোষণা করা হবে ইনশাআল্লাহ। আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, আমাদের খসড়া করা আছে। শুধু ডেট, টাইমের জন্য অপেক্ষা। অক্টোবরে তফসিল ঘোষণার আগেই সব কাজ শেষ করতে হবে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ৬০-৭০ দিন আগে অক্টোবরে তফসিলের পরিকল্পনা রয়েছে। ডিসেম্বরে যদি নির্বাচন করি, এটা আয়নার মতো পরিষ্কার হয়ে আছে। যাতে আর কোনো সংশয় না থাকে, সেজন্য জুন-জুলাইয়ে (অ্যাকশনপ্ল্যান প্রকাশ) করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনি প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে প্রশিক্ষণ; রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের মতামত নেওয়া। সেনাবাহিনী; অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বরাষ্ট্রসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়; মাঠপ্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে। এই কাজটা ব্যাপক, তবে আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে বৈঠক করতে হবে। তিনি জানান, জুনের মধ্যে ভোটার তালিকার কাজ শেষ হবে।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে। তফসিল ঘোষণার ১০-২০ দিন আগেই কেউ নিবন্ধন চাইলে দেওয়া সম্ভব হবে না। দলের নিবন্ধন গেজেট প্রকাশ তফসিল ঘোষণার আগেই শেষ করতে হবে। এজন্য আমাদের টার্গেট রয়েছে জুলাই-আগস্টের মধ্যে এটা শেষ করার। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একাধিক সম্ভাব্য তারিখ রেখেই এবার তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচনি মালামাল কেনাকাটা থেকে শুরু করে গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত সব কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করা থাকবে রোডম্যাপে। সে অনুযায়ী নির্বাচনি প্রস্তুতি এগিয়ে নেবে ইসি সচিবালয়।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটের অন্তত ছয় মাস আগে অন্তত দুই ডজন বিষয়ভিত্তিক নির্বাচনি প্রস্তুতিমূলক কাজের খসড়া তালিকা তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের এবং পরের কার্যক্রমের ধারাবাহিক বর্ণনা থাকছে এই কর্মপরিকল্পনায় (রোডম্যাপ)। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনি মালামাল কেনাকাটা থেকে শুরু করে গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত সব কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করা থাকবে। সে অনুযায়ী নির্বাচনি প্রস্তুতি এগিয়ে নেবে ইসি সচিবালয়। সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধে ‘কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ’ অনুষ্ঠান করে তৎকালীন ইসি। এর আগে একাদশ সংসদ ২০১৮ সালে অক্টোবরের মাঝামাঝি কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নসূচি অনুমোদন করে তৎকালীন কমিশন। বর্তমান ইসি গেল বছর নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে দায়িত্ব নেন। মে মাসে ছয় মাস পূর্ণ হবে। এরই মধ্যে হালনাগাদ ভোটার তালিকার কাজও শেষ হবে। আর নিজেদের মেয়াদের এক বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের কাজ সারতে হবে এ কমিশনকে।
কী থাকছে রোডম্যাপে : নতুন দল নিবন্ধন, সীমানা নির্ধারণ, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), নির্বাচনি আচরণ বিধিমালা, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা, ভোট কেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার, নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনাকাটাসহ সংশ্লিষ্ট আইন-বিধি সংস্কারের পদক্ষেপ চলমান রয়েছে। রাজনৈতিক দল, অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময়, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও মাঠপ্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক, রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের ব্রিফিং, নির্বাহী-বিচারিক হাকিম নিয়োগ নির্বাচনি কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত, প্রশিক্ষণ, ম্যানুয়েল মুদ্রণ, মনোনয়নপত্র মুদ্রণসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি নিয়ে কাজের শুরু ও শেষ করার সম্ভাব্য সময় পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তফসিলের আগে-পরে ভোটার তালিকা মুদ্রণ, কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, ব্যালট বাক্স সরবরাহ, ব্যালট পেপার ছাপানো থেকে ফলাফল গেজেটে প্রকাশের মতো কাজের সময়সীমা থাকবে অ্যাকশনপ্ল্যানে। সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনি সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে এই নির্বাচনি রোডম্যাপ চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন। কেননা নির্বাচনি সংস্কারের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশসহ (আরপিও) অন্যান্য নির্বাচন আইনকানুন সংশোধন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। অন্যদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিয়ে আইন-বিধি সংস্কার, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত; সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া নির্বাচনের বাজেট প্রস্তুত করার কাজ চলমান রয়েছে।